ইউনিয়ন পরিষদের পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ দেখা গেছে।
উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বিএনপি নেতা ও মাদক মামলার আসামিকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
আগামী বছর ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ঝিনাইগাতী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচন হবে। এরই মধ্যে ইউনিয়নগুলোতে নৌকা প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
জেলার অন্য উপজেলায় মনোনয়ন নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকলেও ঝিনাইগাতীর দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দলে যোগ দেয়া নতুন সদস্যদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধানশাইল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদক মামলার আসামি তৌফিকুর রহমান এনামুলকে। এতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ওই ইউনিয়নে। এ নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। তাই দলের ত্যাগী কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে ধানশাইল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘এনামুল আমার প্রতিবেশী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
‘তিনি মাদক মামলার আসামি। তার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার পরিবর্তে আমরা দলের ত্যাগী কোনো নেতাকে মনোনয়নের দাবি জানাই।’
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা এনামুলের পক্ষে নেই। তাকে বাদ দিয়ে যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘তৌফিকুর রহমান এনামুল ধানশাইল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটি আমার সময়েই অনুমোদন করা।’
এ বিষয়ে তৌফিকুর রহমান এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। পরে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে হাতীবান্দা ইউনিয়নে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য ওবাইদুল ইসলামকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
এ বিষয়ে ওবাইদুল ইসলামের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন জানান, গত নির্বাচনে আমি নৌকার বিরোধী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। যুবলীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করি। তবে আমার দলীয় কোনো পদ নেই।
‘এবার আমি দলীয় মনোনয়ন পাব না, তাই আমার বাবা মনোনয়ন চেয়েছেন। মনোনয়ন পেয়ে তিনি এখন গণসংযোগ করছেন। যারা এর বিরোধিতা করছে তারা জামায়াত-বিএনপি করে।’
হাতিবান্ধা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এফ এম ফকরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ওবাইদ সাহেব ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। তিনি কীভাবে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন, সেটা জানি না। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, তাও জানি না।’
ইউনিয়ন আওয়াম লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মকবুল হোসেন জানান, ওবাইদুল ইসলামকে কখনও আওয়ামী লীগ করতে দেখেননি।
এ বিষয়ে মো. ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিএনপি করিনি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেছি। আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গঠিত নতুন কমিটির সহসভাপতি।’
একইভাবে কাংশা ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সভাপতির ছেলে জহুরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন। ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নে তার বাবা গত বছর নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এবার ছেলেকে দেয়া হয়েছে দলীয় প্রতীক।
এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর জাল করে উপজেলা সভাপতি এসব প্রার্থীকে প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। আমি সঠিক প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার দাবি করে আসছি।’
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেস নাঈম মুঠোফোনে বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যে তালিকা দিয়েছে, সেটাই জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত মতামতে কোনো তালিকা কেন্দ্রে পাঠাইনি। আর উপজেলা থেকে পাঠানো তালিকা জেলা কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।’