বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাকার অভাবে জীবনযুদ্ধে হারছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:০২

বীর মুক্তিযোদ্ধা ছকেল উদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। আর এখন বিনা চিকিৎসায় মরতেছি… হাসপাতালে ভর্তি, কেউ দেখতেও আসে নাই। দেশের জন্য যুদ্ধ করলাম, বুকে গুলি খাইলাম আর এখন বিনা চিকিৎসায় মরতেছি।’

যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও টাকার অভাবে জীবনযুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জের সিংগাইরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছকেল উদ্দিন।

বয়সের ভারে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ, সব শেষে ক্যানসার। টাকার অভাবে তার চিকিৎসাও করতে পারছেন না স্বজনরা, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছেন এই দেশপ্রেমিক।

স্বজনদের অভিযোগ, প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনের কাছে সাহায্য চেয়েও মেলেনি কিছু।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন সিংগাইর উপজেলার গাড়াদিয়া এলাকার ছকেল উদ্দিন। যুদ্ধে বুকে ও পায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিও তাকে টলাতে পারেনি। সুস্থ হয়ে লড়েছেন ফের, স্বাধীন করেছেন প্রিয় মাতৃভূমি।

দেশের সেই সূর্যসন্তান এখন মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের ষষ্ঠ তলার ১৭ নম্বর শয্যায় ভর্তি। নানা রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ছকেল এখন বিছানা থেকে উঠতেই পারেন না।

মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দেশ স্বাধীনের পর কৃষিকাজ করে কোনোমতে সংসার চালাতেন। চার ছেলেকে বড় করতে প্রবাসেও কাজ করেছেন। শারীরিক সমস্যায় চার বছর আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে ডায়াবেটিক ও কিডনির সমস্যা। পরে ধরা পড়ে মারণব্যাধি ব্ল্যাড ক্যানসার।

এরপর জমানো অর্থ আর ছেলেদের সহায়তায় অপারেশন করা হয় তার। এখন ছেলেদের টাকাও শেষ। অর্থাভাবে তাই তার সঠিক চিকিৎসাও হচ্ছে না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ছকেল উদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। আর এখন বিনা চিকিৎসায় মরতেছি। সঠিক চিকিৎসার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতাদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করে নাই।

‘এখন হাসপাতালে ভর্তি, কেউ দেখতেও আসে নাই। দেশের জন্য যুদ্ধ করলাম, বুকে গুলি খাইলাম আর এখন বিনা চিকিৎসায় মরতেছি।’

ছকেল উদ্দিনের বড় ছেলে প্রবাসী মাহাবুব আলম জানান, তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন প্রবাসে থাকেন। ছোট ভাই পুলিশের কনস্টেবল। তিন বছর ধরে তারা ভাইরা প্রবাসে থাকেন। বাবার অসুস্থতার খবর শুনে দেশে আসেন।

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের পরামর্শে বাবাকে ঢাকায় অপারেশন করাই। চার ভাইয়ের যে টাকা-পয়সা ছিল সব শেষ হয়েছে। টাকার অভাবে এখন ঢাকায় নিতে পারছি না, থেরাপিও দিতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করছি।

‘টাকার অভাবে চোখের সামনে বাবা মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে। আর ছেলে হয়ে তা দেখতে হচ্ছে। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর থাকতে পারে।’

ছকেল উদ্দিনের চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান ছেলে মাহাবুব।

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘কাগো জন্য আমার স্বামী দেশ স্বাধীন করল। সরকার আর প্রশাসনের লোকজন তো আমাগো খোঁজ নিল না। সবাই জানে তিনি অসুস্থ, তাও কেউ আইল না।

‘তার অবস্থা ভালো না, খুব খারাপ। সরকার যদি এখন আমাগো সাহায্য করে তাইলে তার সঠিক চিকিৎসা হইব। তিনি আগের মতো সুস্থ হবে। এখন আল্লাহ আর সরকারের মুখের দিকে তাকাইয়া আছি।’

চিকিৎসক ওসমান গনি বলেন, ‘ছকেল উদ্দিনের অবস্থা ভালো না। দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া উচিত। উন্নত চিকিৎসা হলে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন জানান, ছকেল উদ্দিন যে অসুস্থ, তা তিনি জানেন না। আবেদন করলে তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য করবেন।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না, আমি হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে- এটা তো হতেই পারে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে অবশ্যই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর