বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগও

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:২৩

ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা বিব্রত, লজ্জিত। এর বাইরে আর কী বলার আছে।’ আরেকজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। যে অডিওগুলো এসেছে এগুলো যদি সত্যি হয়, বানানো না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সুপারিশ করব।’

মন্ত্রিসভা থেকে সরে যেতে হচ্ছে, এখানেই শেষ নয়, দল হিসেবেও মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুরাদের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে কোনো পদ নেই। তিনি তার নিজ জেলা জামালপুর শাখার স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নিতে হলে জেলা কমিটি থেকে সুপারিশ আসতে হবে। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যবস্থা নেবে।

নিউজবাংলাকে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এখনও দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হবে, এর পর আমি আপনাকে বলতে পারব কী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের দুই নেতার বক্তব্য ফেসবুকে প্রকাশ হলে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে তারা স্থানীয় সরকার ও দলের পদ হারান। এরা হলেন গাজীপুরের জাহাঙ্গীর আলম ও রাজশাহীর কাটাখালীর আব্বাস হোসেন।

তবে মন্ত্রিত্ব হারালে আর দল কোনো ব্যবস্থা নিলে, এমনকি বহিষ্কার করলেও সংসদ সদস্য পদ যাবে না মুরাদের।

যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ধর্ম সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য দেয়ার ঘটনায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও দল থেকে বহিষ্কারের পর ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বরে তিনি নিজে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মুরাদ প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ২০০৮ সালে। তবে তার আসন ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরেরবার নৌকা আবার প্রার্থী দেয় আর জিতে আসেন মুরাদ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মুরাদকে প্রথমে করা হয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। রাজধানীর একটি অভিজাত হাসপাতালে একটি ঘটনায় তার দপ্তর বদল করে করা হয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী। তবে মন্ত্রিসভা ও দলে তার অবস্থান বেশ সংহতই ছিল।

আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সিআরআইএ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এই নেতা সম্প্রতি ৭২ এর সংবিধানে ফিরে গিয়ে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবি তোলেন। তার এই দাবি সেক্যুলার রাজনীতিতে বিশ্বাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়ও হয়।

তবে তিনি সম্প্রতি একটি অনলাইন টকশোতে এসে যে ভাষায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে আক্রমণ করেন, সেটিতে নিন্দার ঝড় ওঠে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে অশালীন ভাষায় ঘায়েল করার এই চেষ্টার পর প্রতিবাদ জানায় বিএনপি। নারী নেত্রীরাও এর সমালোচনা করেন। তিনি এই ধরনের বক্তব্য দিয়েও কীভাবে মন্ত্রিসভায় থাকেন, সেই প্রশ্ন তোলে বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন।

এর মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান, তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন কি না। জবাবে মুরাদ বলেন, তিনি বক্তব্যে অটল আর রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সমালোচনাকে গা করছেন না।

এর মধ্যে ফেসবুকে একটি ফোন রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে, যাতে পুরুষ কণ্ঠের একজন মুরাদ হাসান বলে চিহ্নিত হন। তিনি একজন চিত্রনায়িকাকে তার কাছে যেতে বলেন। না গেলে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তুলে নেয়ার হুমকি দেন। আর সেই নায়িকাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছাও পোষণ করেন।

এর আগে আরও একটি অনলাইন সাক্ষাৎকারে মুরাদ হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়েও করেন আপত্তিকর মন্তব্য। এসব ঘটনায় ঘরে-বাইরে সব জায়গায় অবস্থান হারান তিনি।

এসব ঘটনায় সোমবার রাতে মুরাদকে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জানান, মঙ্গলবারের মধ্যেই তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করে মুরাদের শাস্তির দাবিতে। নেতারা বলেন, কেবল মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ নয়, মুরাদকে ক্ষমা চাইতে হবে, নইলে তিনি পার পাবেন না।

দিনভর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা সবাই বলেছেন, মুরাদ যা করেছেন, তাতে তারা বিব্রত, এটা লজ্জাজনক।

ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা বিব্রত, লজ্জিত। এর বাইরে আর কী বলার আছে।’

আরেকজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। যে অডিওগুলো এসেছে এগুলো যদি সত্যি হয়, বানানো না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সুপারিশ করব।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে তো আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক কথা বলেছেন। তার বক্তব্যই আমার বক্তব্য।’

মুরাদকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ জানানোর আগে সোমবার দুপুরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, মুরাদের বক্তব্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সরকারের অবস্থানের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য এসব না। এই ধরনের বক্তব্য কেন সে দিল, অবশ্যই আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর