অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় উদযাপন হলো বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে হায়াত রিজেন্সী হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের হাইকমিশন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কাউন্সিলর তৌহিদুলের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সব শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম, ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও এতে ভারতীয় সহায়তা, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা, বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনে তৎকালীন ভারত সরকারের ভূমিকা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতা তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচনা, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এবং বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশি ও ভারতীয় শিল্পীরা পৃথকভাবে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান, ভারতের হাইকমিশনার মনপ্রীত ভোরা ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হারিন্দার সিধু বক্তব্য দেন।
এছাড়া রাশিয়াসহ অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত ৩১টি দেশের মিশনপ্রধান, ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, থিংকট্যাঙ্ক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভারতীয়সহ শতাধিক ব্যক্তি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনার সুফিউর রহমান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা, স্বাধীন বাংলাদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সহায়তা এবং প্রধানমন্ত্রী মুজিব ও ইন্দিরা কর্তৃক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের বিষয়কে স্মরণ করেন। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ এবং দু’দেশের সব ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গতিশীল নেতৃত্বে বেগবান হয়েছে।
ভারতের হাইকমিশনার মনপ্রীত ভোরা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে থাকতে পেরে ভারতের জনগণ গর্বিত। বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং বাংলাদেশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হারিন্দার সিধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে অস্ট্রেলিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করেন। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানের জন্য বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন তিনি। শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অস্ট্রেলিয়াসহ ১৮টি দেশে বাংলাদেশ ও ভারতীয় দূতাবাস যৌথভাবে দিবসটি পালন করেছে। গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দিবস ৬ ডিসেম্বরকে মৈত্রী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন।