বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে গাজীপুরের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কে পানি জমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী, পরিবহনশ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
রোববার বিকেল থেকেই গাজীপুরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত থেকে শুরু হয় অঝোর বৃষ্টি। সোমবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারকাজ চলমান থাকায় খানাখন্দে পানি জমে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যান চলাচলে দেখা দিয়েছে চরম ধীরগতি।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও দিনভর ভারী বৃষ্টি আর খানাখন্দের কারণে সেটি কাজে দিচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে রোববার সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস, বড়বাড়ি, গাজীপুরা, কলেজ গেট, স্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, উলুখোলা-মিরেরবাজার বাইপাস সড়ক ঘুরে অসহনীয় দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়।
এ সময় দেখা যায়, গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর অংশে বিআরটির নির্মাণকাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। অধিকাংশ জায়গায় উঠে গেছে ঢালাই ও পিচ। ভারী বৃষ্টিতে এসব খানাখন্দে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার।
হাঁটু পানির মধ্যে গাড়ি চালাতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তে উল্টে পড়ছে রিকশা ও মোটরসাইকেল। সোমবার সকালে কুনিয়া তারগাছ ও মিলগেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গর্তে উল্টে পড়ে দুটি ট্রাক।
এ সময় উজানভাটি পরিবহনের চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত কয়েক হাজার খানাখন্দ। কোমরের হাড্ডি ব্যথা করে এই রুটে গাড়ি চালাইতে গিয়া। অসময়ের এই বৃষ্টি আমাগো কষ্ট আরও কয়েক গুণ বাড়াইয়া দিছে।’
মহাসড়কের ময়লা পরিষ্কার করে পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেও আদতে তা কাজে দেয়নি।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন সানাউল্লাহ হক। তিনি বলেন, ‘বোর্ডবাজার থেকে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু বৃষ্টিতে পুরো সড়ক কাদামাটি ও খানাখন্দে ভরা। সকাল থেকে কোনো কাজই করতে পারিনি।’
অসময়ের এ বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষও।
নগরীর কলেজ গেট এলাকার ফুটপাতের দোকানি সালাম মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে দোকান খুলবার পারি নাই। কী করুম বুঝতাছি না। দোকান না খুললে বউ-পোলাপাইন না খাইয়া থাকব।’
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও ভারী বৃষ্টির কারণে যান চলাচলে ধীরগতি। আমরা সড়কের পাশের নালাগুলো পরিষ্কার করে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।’
ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মিরেরবাজার এলাকায় উলুখোলা ও ভোগরামুখী লেনে অসংখ্য খানাখন্দ রয়েছে। ওই সড়কে গাড়ি টানতে না পারায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ছে।’