ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ থেকে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রোববার সন্ধ্যা থেকে অব্যাহত এ বৃষ্টিপাতের কারণে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছেন সুন্দরবনের শুঁটকিপল্লির জেলেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে সুন্দরবনের আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়ীয়া ও শ্যালারচরসহ দুবলার জেলে পল্লিগুলো তিন ফুটের বেশি পানির নিচে ডুবে গেছে। জেলেদের দাবি, এর ফলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টন মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি।
দুবলার শুঁটকিপল্লির জেলে জামাল শেখ বলেন, ‘শুঁটকি করার জন্য প্রায় ১০ হাজার টন কাঁচা মাছ চরের বিভিন্ন সাবাড়ে দেয়া হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে। যার ফলে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নষ্ট হচ্ছে মাছ।’
এই শুঁটকিপল্লির মহাজন শহিদ মল্লিক বলেন, ‘আবহওয়া খারাপ হওয়ার আগেই সাগর থেকে ধরে আনা ১০ থেকে ১৫ হাজার টন কাঁচা মাছ এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কাল রাত থেকে বৃষ্টির তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের সময় চরের সবকিছু ডুবে যাচ্ছে।’
জেলে ইউনুস আলী ফকির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে প্রবল বর্ষণের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের পানি বেড়ে মাঝেরকেল্লাসহ আশপাশের চর ডুবে গেছে। পানিতে সেখানকার কোটি টাকার শুঁটকি মাছ ভিজে নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া সাগরে বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে গেছে।’
ঝোড়ো হাওয়ায় জেলেদের অস্থায়ী ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলেরা দুর্ভোগে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।
নিউজবাংলাকে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শনিবার ও রোববার রাতে আলোরকোলে জেলেদের মাছ শুকানোর মাচা ও মাঠ ৩ থেকে ৪ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে জেলেদের শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ অনেক মাছ ভেসে গেছে। পানিতে জেলেদের থাকার এবং রান্না করার স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন।’
এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের জেলেপল্লি দুবলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলেদের বিপুল পরিমাণ শুঁটকি সাগরে ভেসে গেছে। অনেক মাছ ভিজে নষ্ট হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় অনেক ফিশিংবোট ও জেলে নৌকা সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে আছে।’
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুন্দরবনের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে জোয়ারে পানি বেড়েছে। অনেক স্থান প্রায় ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। দুবলার শুঁটকিপল্লিতে জেলেদের ক্ষতি হয়েছে।’