ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক এখন এমন পর্যায়ে রয়েছে, যেন তা সোনালি এক অধ্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রথম স্বীকৃতির ৫০ বছর উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক একটা মডেল। আমাদের সম্পর্কটা এতটা দৃঢ় যে আমরা সোনালি অধ্যায়ে পৌঁছে গেছি। দুই দেশের গভীর সম্পর্কের দিকে সারা পৃথিবী তাকিয়ে আছ।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের কারণে ’৭১ সালে আমাদের মর্যাদা বেড়েছে। আজকেও গভীর সম্পর্কের কারণে সারা পৃথিবী আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক একটি মডেল। আমাদের যতগুলো বড় সমস্যা, সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। আমরা এখানে একটি বুলেটও খরচ করিনি। এটা আমাদের দেশে দেশে পৌঁছে দিতে হবে। যেন অন্যরা এটা অনুকরণ করে।
‘ভারতের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর হয়েছে। আগামী ৫০ বছরে আমাদের যত ধরনের সমস্যা আছে সমাধান করব। আমরা ডায়লগ এবং আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করব। আমি তো সেই দিনের আশায় আছি, যেদিন দুই দেশের মানুষের আসা-যাওয়ায় কোনো ভিসা লাগবে না। আমরা সড়ক, রেল ও নৌপথে আরও যোগাযোগ বাড়াতে চাই।’
বাংলাদেশ ও ভারত এবার বিশ্বের ১৮টি মিশনে যৌথভাবে মৈত্রী দিবস পালন করছে। আগামীতে বিশ্বে বাংলাদেশে যত মিশন রয়েছে সবগুলোয় ভারতকে নিয়ে মৈত্রী দিবস পালন করতে চান মোমেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সেনারা আমাদের জন্য রক্ত দিয়েছে। আমরা রক্তের সম্পর্ককে আরও গভীরভাবে উদযাপন করতে চাই। ভারতের সঙ্গে ১৮টি দেশে মৈত্রী দিবস পালন করছি। আমরা আশা করব, আগামীতে বাংলাদেশের যত মিশন আছে ভারত ও বাংলাদেশ মিলে মৈত্রী দিবস পালন করব। এ ক্ষেত্রে আমি ভারতীয় সরকারের সাহায্য চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত, ভুটান, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আলাপ করেছেন। আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এমন উন্নয়ন চাই, যাতে সারা বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কাজ করার মতো অনেক সুযোগ আছে। আমরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভুটানের সঙ্গে দুটি বন্দর খুলে দিয়েছি। বাংলাদেশ-ভারত ও ভুটান মিলে নদীপথ ব্যবহার করতে পারি। ভারত রাজি হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র শুধু পরিবর্তন হয়নি, বদলে গেছে এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে আমাদের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু না থাকলে এই দেশ ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারত না। এটা ভুলে গেলে চলবে না। এখন বাইরে কোথাও আর বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না, এটা মর্যাদার।’
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কার্যকরী সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নুরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েন্টশীল।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব সাংবাদিক হারুন হাবিব। এ সময় অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।