যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসঙ্গ আসে, তখন ‘দ্য টারমিনেটর’, ‘আই রোবট’, ‘ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড’, ‘ব্লেড রানার’ সিনেমা কিংবা টিভি সিরিজগুলোতে দেখানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা মনে পড়ে। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচক চরিত্র হিসেবে যেমন টার্মিনেটর ছিল আর ম্যাট্রিক্স সিনেমায় ছিল সেইন্টিনল।
এইচবিওর ‘ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড’ সিরিজে তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেই ভিকটিম হিসেবে দেখানো হয়।
এর পরেও সিনেমা ও বিনোদন জগতে শুরু থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভালো প্রযুক্তি দেখানোর চেয়ে খারাপ হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে সব সময়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে মানুষের ভীতি কাজ করে। তাই মানুষ কখনোই সেভাবে শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রাসঙ্গিক ভাবেনি।
তবে আই-দা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হিউম্যানয়েড রোবট কিন্তু সবাইকে ভিন্নভাবে ভাবতে শেখাবে। কারণ আই-দাই প্রথম কোনো রোবট শিল্পী ও কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
মহান ইতালীয় কবি দান্তে আলিঘিয়েরির মৃত্যুর ৭০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়ামে আই-দা তার লেখা কবিতা আবৃত্তি করে দর্শকদের শোনায়। সে দান্তের মৃত্যুবার্ষিকীকে সামনে রেখে তার নিজস্ব ডেটা ব্যাংক এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে দান্তের বক্তৃতার প্যাটার্ন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য ‘ডিভাইন কমেডি’র প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাব্য রচনা করে।
আই-দা হলো অক্সফোর্ডের প্রকৌশলী আইদান মিলারের উদ্ভাবিত উচ্চ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট।
মিলার নিজেই তার বানানো রোবটের কাব্য রচনার দক্ষতায় মুগ্ধ। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘এত দুর্দান্ত, আপনি যদি তার লেখা কবিতা পড়েন তবে বুঝতেই পারবেন না যে এটি কোনো মানুষের লেখা নয়।'
শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন আই-দা তার কবিতা পড়ছিল তখন তিনি সিএনএনকে বলেন, ’তার সঙ্গে ভাব বিনিময় করলে আপনি ভুলেই যাবেন, আপনি একজন রোবটের সঙ্গে কথা বলছেন।'
‘আই-দা’ প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে মিলার ও তার দল খেয়াল করেন, আসলে মানুষ কতটা কৃত্রিম। আর রোবট কতটা মানবিক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মিলারের মানুষ সম্পর্কে চিন্তাভাবনাই বদলে যায়।
আই-দা শুধু কবিতাই পড়তে ও লিখতে জানে না, ছবিও আঁকতে জানে। গত অক্টোবরে মিসরে দান্তেকে উপজীব্য করে তার আঁকা চিত্রকর্মের একটি প্রদর্শনীও হয়ে গেছে। তবে সে সময় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। মিসরীয় নিরাপত্তা বাহিনী নজরদারি করা হবে, এমন সন্দেহে আই-দার চোখে লাগানো ক্যামেরা খুলে নেয়।
‘এতেই স্পষ্ট হয় মানুষ প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে কতটা ভীতির চোখে দেখে’, সিএনএনকে এমনটাই বলেছেন মিলার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা। যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কম্পিউটার অ্যালগরিদম কাজে লাগিয়ে যন্ত্র বা বিশেষায়িত কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ করার পদ্ধতি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।