‘বৃষ্টি থামার তো লক্ষণ নেই, উল্টে আরও বাড়িছে। সঙ্গে যে কী ঠান্ডা পড়িছে, তা আর কী বলব! বৃষ্টিতে তো মানুষজন ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। তাই বেচাকেনা ভালো হচ্ছে না।’
বলছিলেন বাগেরহাট পৌরসভার খারদ্বার এলাকার চা-দোকানি ইসমাইল হাওলাদার।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে তিন দিন ধরে বাগেরহাটে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে রোববার সন্ধ্যা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে ঠান্ডা বাতাস। এতে নানা রকমের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে।
শহরের বাসাবাটি কেবি এলাকার রিকশাচালক জামাল শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন দিন ধইরে বৃষ্টি পড়তিছে। আজকে মনে করিলাম বৃষ্টি থামবে, কিন্তু না। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখতিছি না।
‘আমি গরিব মানুষ। বৃষ্টি আর এই ঠান্ডা মাথায় নিয়ে রিকশে চালাতি বাইর হয়েছি। আমার তো ছেলেমেয়ে আছে ভাই। তাই কষ্ট হলেও উপায় নেই।’
- আরও পড়ুন: আজ সারা দিন বৃষ্টি
জাওয়াদের প্রভাবে বাগেরহাটের নদনদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে রোববার সকালে মাছধরা ট্রলারগুলো সাগর থেকে ফিরিয়ে এনে সুন্দরবনের ছোট ছোট খালসহ শরণখোলা, মোংলা ও বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কেবি ফিশারিজ ঘাটে রাখা হয়েছে।
সুন্দরবনের দুবলার চর শুঁটকিপল্লির জেলে আব্দুল গফুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই দিনে যা মাছ পেয়েছি সেগুলা শুকাতে পারি নাই। এমন অবস্থা থাকলে এই মাছগুলা নষ্ট হতে শুরু করবে। কালকেও যদি সূর্যের দেখা না পাই তাহলে এখানকার জেলে-মহাজনদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, জাওয়াদ এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উত্তর উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
- আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে জনদুর্ভোগ
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহাদাত হোসেন জানান, মোংলা বন্দরের সব কাজ স্বাভাবিক আছে। বন্দরে আটটি বিদেশি জাহাজ অবস্থান করছে। পণ্য বোঝাই ও খালাস স্বাভাবিক আছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান বলেন, ‘জাওয়াদ আঘাত হানলে করণীয় বিষয়ে জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করেছে। জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
জাওয়াদের প্রভাবে বরিশালে রোববার রাতভর মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।’
স্থানীয় নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত পরিবর্তন না হলে ছোট-বড় সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
এ ছাড়া ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতেও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত আছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় সোমবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার ভোররাত থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত আছে।
বাঁকখালী, মাতামুহুরী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মনোয়ার হোসেন জানান, উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের আভাস রয়েছে।
৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি থাকায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জাহাজ চলাচল বন্ধ আছে। এতে এই দ্বীপে আটকা পড়ে আছেন তিন শতাধিক পর্যটক।