ভোর থেকে বিরামহীন বৃষ্টির মধ্যেই রাজধানীর রামপুরায় অবস্থান নিয়েছে সড়কে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রামপুরা ব্রিজের ওপর সোমবার দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটে অবস্থান নেয় তারা। ১২টা ৫৯ মিনিটে তারা অবস্থানস্থল থেকে চলে যায়। তাদের মুখে বাঁধা ছিল কালো কাপড়।
ওই সময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া খিলগাঁও সরকারি মডেল কলেজের ছাত্রী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমরা বৃষ্টির মধ্যেও আজ নিরাপদ সড়কের দাবিতে অবস্থান নিয়েছি। আর এতে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সমর্থন রয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে আছি এবং থাকব।’
পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে জানতে চাইলে সোহাগী বলেন, ‘আপাতত আমাদের আগামীকাল কোনো কর্মসূচি নাই। আবহাওয়া ঠিক হলে আমরা আবারও কর্মসূচি দিব।’
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো হলে রামপুরায় নিহত মাইন উদ্দিনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একরামুন্নেসা স্কুল থেকে সাইকেল র্যালি নিয়ে নিহত আরেক শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের প্রতিষ্ঠান নটরডেম পর্যন্ত যাব।’
নিরাপদ সড়ক সংশ্লিষ্ট ১১ দফা দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে রামপুরায় এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সড়কে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে রোববার রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
রামপুরা ব্রিজের ওপর রোববার দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। বেলা ১টা ৫ মিনিটে তারা অবস্থানস্থল থেকে চলে যায়। ওই সময় তাদের হাতে ছিল নানা ধরনের ব্যঙ্গচিত্র।
ব্যঙ্গচিত্রে নানা স্লোগানের মধ্যে ছিল, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গণপরিবহনে হাফ পাস চাই’, ‘জাতির ভবিষ্যৎ মরলে কে গড়বে সোনার বাংলা’।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া খিলগাঁও সরকারি মডেল কলেজের ছাত্রী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমরা আমাদের যে ১১ দফা দাবি আছে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন কারও বিপক্ষে না। আমরা সবার হয়ে এই আন্দোলন করছি। অথচ আমাদের আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে।
‘এসব অপপ্রচার করে আমাদের থামিয়ে দেয়া যাবে না। আমরা আমাদের চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি আর যাব।’
এর আগে শনিবার সড়কে অব্যবস্থাপনার প্রতি লাল কার্ড দেখায় ১১ দফা দাবিতে রামপুরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রামপুরা ব্রিজের ওপর ওই দিন দুপুর ১২টার পর পরই অবস্থান নেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ওই সময় তারা লাল কার্ড উঁচিয়ে সড়ক ও পরিবহন খাতের লুটপাট আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় পুরো সিস্টেম জড়িত। এই সিস্টেমে ঘুষ আছে, লুটপাট আছে। এর সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি লোক। এই লুটপাট ও দুর্নীতিকে আজ আমরা লাল কার্ড দেখাচ্ছি।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রেফারি’ দাবি করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা জানায়।
সোহাগী বলেন, ‘যখন ফুটবল খেলা হয়, খেলোয়াড়রা ভুল করলে লাল কার্ড দেখায়। আমরা সেই রেফারিদের ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছি।
‘আমরা দেখাতে চাই বাংলার মাটিতে দুর্নীতি হচ্ছে, যে মাটিতে ছাত্রসমাজ বড় বড় আন্দোলন করেছে। আজ আবার ২০২১ সালে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি।’