বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিবাহিত নারী-পুরুষের ১৮ মাসেই ‘নিরানন্দ জীবন’

  •    
  • ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:০৬

গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত জীবনে মানুষ অনেক ভাবে বদলে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই বদল মানুষের আগের চরিত্রের একদম বিপরীত। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, দম্পতিরা এক সঙ্গে থাকতে প্রতিদিন বহুমুখী লড়াইয়ের মুখোমুখি হন। অংশীদারি জীবনে খাপ খাইয়ে চলার এই নিরন্তর সংগ্রামে নিজেদের খাঁটি ব্যক্তিত্ব আর টিকে থাকে না।

বিয়ের আগে যেকোনো প্রেমময় সম্পর্ক ঘিরে থাকে সীমাহীন ভালোবাসা ও উত্তেজনার গভীর অধ্যায়। সঙ্গীর ভুলগুলোও তখন মনে হয় অত্যন্ত মধুর, প্রতিশ্রুতি থাকে আজীবন সেই ভুলগুলো মাথায় তুলে রাখার।

তবে বিয়ের পরেই ঘটে ছন্দপতন। দাম্পত্য জীবন মানেই প্রতিনিয়ত অসংখ্য বোঝাপড়া, আর খুঁটিনাটি হিসাব-নিকাশ। অনেকেই বলেন, মধুচন্দ্রিমা পার হলেই শুরু হয় আসল ‘বিবাহিত জীবন’। সঙ্গীর যেসব ‘মধুর ভুল’-এ মুগ্ধ হয়ে প্রেমের শুরু, বিবাহিত জীবনে সেগুলোই হয়ে ওঠে ‘গলার কাঁটা’। অনেকে এমনও বলেন, বেশির ভাগ দাম্পত্য জীবনে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে সমঝোতা ও দায়িত্বের বোঝা, আর ‘গভীর প্রেম’ পালিয়ে যায় জানালা দিয়ে।

দাম্পত্য জীবন কি সত্যিই এতটা ফ্যাকাশে? আমরা চাইলেও কি বিয়ের আগে যেভাবে কেটেছে, সেভাবেই দাম্পত্যকে আমৃত্যু মধুরতম রাখতে পারি? বিয়ের পরেও কি থাকা যায় আগের মতোই প্রাণচঞ্চল?

এসব প্রশ্নের খুব বেশি স্বস্তিকর জবাব নেই মনোবিজ্ঞানীদের কাছে। উল্টো তারা বলছেন, বিয়ের মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই বদলে যায় মানুষ। এই বদলে যাওয়া ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়, এমনকি জিনগত বৈশিষ্ট্যও আটকে রাখতে পারে না ব্যক্তিত্বের রূপান্তর।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়ার ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাস্টিন ল্যাভনারের নেতৃত্বে এক দল গবেষক দাবি করছেন, বিয়ে মানুষের আচরণ ও ব্যক্তিত্বকে প্রচণ্ড বদলে দেয়।

কিছু কিছু মনোবিদ মনে করেন, মানুষের বৈশিষ্ট্য ও আচরণ মূলত জিনগত ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এর সঙ্গে শৈশবের পরিবেশেরও বড় প্রভাব রয়েছে। তাদের ধারণা, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর মানুষের আচরণ ও বৈশিষ্ট্যে বড় ধরনের আর কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

তবে ল্যাভনারের দলের গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত জীবনে মানুষ অনেক ভাবে বদলে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই বদল মানুষের আগের চরিত্রের একদম বিপরীত। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, দম্পতিরা এক সঙ্গে থাকতে প্রতিদিন বহুমুখী লড়াইয়ের মুখোমুখি হন। অংশীদারি জীবনে খাপ খাইয়ে চলার এই নিরন্তর সংগ্রামে নিজেদের খাঁটি ব্যক্তিত্ব আর টিকে থাকে না।

গবেষণায় ১৬৯ দম্পতিকে বেছে নিয়ে তাদের বিবাহিত জীবনের তিনটি পর্যায়ে কিছু প্রশ্নের জবাব নেয়া হয়েছে। বিয়ের ছয় মাস, ১২ মাস এবং ১৮ মাসে এসব প্রশ্নের জবাব থেকে বৈবাহিক জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি এবং ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনের মাত্রা পরিমাপ করেছেন গবেষকেরা।

একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব যাচাইয়ে ‘বিগ ফাইভ’ তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয়। এই তত্ত্বে ব্যক্তিত্বের পাঁচটি মৌলিক দিক পর্যালোচনা করা হয়। এগুলো হচ্ছে- অকপটতা (ওপেননেস), সুবিবেচনা (কনসিয়েনসেচনেস), বহির্মুখীনতা (এক্সট্রাভার্সন), অন্যের মতকে গ্রহণের ক্ষমতা (এগ্রিয়েবলনেস) এবং মানসিক অস্থিরতা (নিউরটিকিজম)। সহজে মনে রাখার জন্য বিগ ফাইভকে ইরেজিতে বলা হয় ওশান (OCEAN)।

ল্যাভনারের দলের গবেষণায় বিয়ের আগে-পরে নারী-পুরুষের ব্যক্তিত্বে বিগ ফাইভের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। সবচেয়ে খারাপ খবর হলো, প্রেম উপচে পড়া স্বামী-স্ত্রীকে বিয়ের মাত্র দেড় বছর বা ১৮ মাস মধ্যেই দেখা গেছে উল্টো চেহারায়।

অকপটতা: ১৮ মাসে স্ত্রীদের অকপট চরিত্রে রীতিমতো ধস নামতে দেখেছেন গবেষকেরা। তারা বলছেন, বিয়ে পরবর্তী একঘেয়ে জীবন পরিচালনার প্রয়োজনেই সম্ভবত নারীর জীবনে এমন পরিবর্তন।

সুবিবেচনা: বিবাহিত জীবনে স্বামীদের আগের চেয়ে ‘বিবেচক’ হয়ে উঠতে দেখেছেন গবেষকেরা, তবে এক্ষেত্রে স্ত্রীদের অগ্রগতি বলতে গেলে শূন্য। গবেষকদের ধারণা, সংসার জীবনে নির্ভরতা ও দায়িত্বশীলতার চাপ থেকেই হয়ত পুরুষ ‘সুবিবেচক’ হয়ে উঠতে বাধ্য হয়।

বহির্মুখীনতা: গবেষণায় দেখা গেছে বিয়ের প্রথম দেড় বছরে স্বামীরা লাগামছাড়া জীবনের পরিবর্তে অনেক বেশি অন্তর্মুখী হয়ে ওঠেন। আরও কয়েকটি গবেষণাতেও এসেছে, বিবাহিত দম্পতিদের সামাজিক নেটওয়ার্ক অনেক সীমাবদ্ধ হয়ে আসে।

অন্যের মতকে গ্রহণের ক্ষমতা: বিয়ের পর ধীরে ধীরে দম্পতিদের মধ্যে মতবিরোধ প্রকট হতে দেখা গেছে গবেষণায়। সামান্য বিষয় নিয়েও বিবাদে জড়িয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। এ ক্ষেত্রে স্বামীর তুলনায় স্ত্রীর দ্বিমত করার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। বিয়ের পর সময় যত গড়িয়েছে স্ত্রীরা তত বেশি নিজেদের মতকে জাহির করতে চেয়েছেন।

মানসিক অস্থিরতা: বিয়ের পর মানসিক স্থিতি পেতে স্বামীদের তুলনায় স্ত্রীদের অনেক এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। সাধারণ ভাবে পুরুষের তুলনায় নারীর মানসিক অস্থিরতা বেশি লক্ষ করা গেলেও বিবাহিত জীবনে এর উল্টো ঘটতে দেখা গেছে।

ল্যাভনারের দলের গবেষণায় বিবাহিত জীবন নিয়ে তৃপ্তিও ধীরে ধীরে কমতে দেখা গেছে। এক কথায় মধুচন্দ্রিমার সময়টিই বিবাহিত জীবনের একমাত্র ‘সুখকর অধ্যায়’ বলে চিহ্নিত হয়েছে গবেষণায়।

একটাই শুধু আশার কথা, বিয়ের শুরুতে যে স্বামীরা প্রচণ্ড খোলামেলা মানসিকতার ছিলেন, তাদের দাম্পত্য জীবন ফ্যাকাশে হতে কিছুটা বেশি সময় লেগেছে। আর যারা শুরুতেই ছিলেন গোটানো, তাদের সংসার রং হারিয়েছে কয়েক মাসের মধ্যে।

অন্যদিকে, স্থির মানসিকতার নারীদের সংসার সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে, বিপরীতে ১৮ মাসের মধ্যে সংসারে আকর্ষণ অনেকটাই হারিয়েছেন অস্থির মানসিকতার নারীরা। গবেষকদের ধারণা, স্ত্রীর মানসিক স্থিরতা স্বামীর ওপরেও প্রভাব ফেলে, আর তাই দাম্পত্য তৃপ্তি কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

গবেষণায় বেরিয়ে আসা সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো, বিয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের যে পরিবর্তন ঘটে তাকে কোনো উপায়েই ঠেকানো সম্ভব নয়। গবেষকেরা বলছেন, বেশি বা কম বয়সে বিয়ে করা দম্পতিদের ক্ষেত্রেও গবেষণার ফলাফল একই এসেছে। এমনকি বিয়ের আগেই শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো নারী-পুরুষও বিয়ের পর দীর্ঘমেয়াদে সুখী দাম্পত্য সম্পর্ক গড়তে খুব একটা সফল হননি।

এই গবেষণা চলার সময়ে কয়েক দম্পতির ঘরে এসেছে সন্তান। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাদের জীবনেও ১৮ মাসের মধ্যেই ভর করেছে হতাশা ও অতৃপ্তি।

এ বিভাগের আরো খবর