উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজেট সহায়তার আওতায় প্রকল্পে ঋণ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ৫০ কোটি ডলার দ্রুত ছাড়ের কথাও বলেন তিনি।
রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে এ অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী।
বৈঠকে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মিজ ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিজ মার্সি মিয়াং টেম্বন, বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) মিজ যৌবিদা খেরুস আলাউয়া প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচলিত নিয়মে প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ দেয়ার কারণে অনেক সময় দেখা যায় প্রকল্প প্রস্তুত থাকে না। সেগুলো প্রস্তুত করতে অনেক কালক্ষেপণ হয়।’এই মন্থর গতি থেকে উত্তরণের জন্য অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করেন যাতে বাজেট সাপোর্ট আকারে প্রকল্প ঋণ দেয়া হয়।
তিনি জানান, এটা করা হলে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব প্রকল্প প্রস্তুত আছে সেসব প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড় করা সম্ভব হবে এবং প্রকল্পের গতি ত্বরান্বিত হবে।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তার আওতায় এবং প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ দিয়ে থাকে বাংলাদেশকে। প্রকল্পে ঋণ পেতে নানা জটিলতা ও শর্ত থাকে। যে কারণে অর্থছাড়ে দেরি হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতি হয়। অন্যদিকে বাজেট সাপোর্ট বা সহায়তার ঋণের শর্ত সহজ থাকে এবং দ্রুত টাকা ছাড় হয়। এই টাকা সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নসহ যেকানো খাতে ব্যয় করতে পারে।
করোনা মহামারির কারণে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমবাজার, আর্থিক ও সামাজিক খাত সচল রাখার লক্ষ্যে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের ‘প্রোগামেটিক রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডেভলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’- প্রকল্পের আওতায় ৫০ কোটি ডলার সমপরিমাণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। এই টাকা দ্রুত ছাড় করণের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান অর্থমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংক উল্লিখিত প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চায়। জবাবে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, শর্তাবলির অধিকাংশই ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট শর্তাবলিও সহসাই পূরণ করা সম্ভব হবে।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির গতিধারা তুলে ধরেন। বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত রয়েছে।
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি। এর জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্বের দাবিদার দেশের সাধারণ মানুষ, যারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।’
বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শ্যেফার কোভিড-১৯ থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো করছে এবং কোভিড মোকাবিলা করে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও চলমান অনেক প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’ পাইপ লাইনে আটকে থাকা বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ দ্রুত ছাড় করার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান তিনি।