এক মাসেরও বেশি সময় পর একই আয়োজনে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের এক মঞ্চে দেখা গেল।রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় একই মঞ্চে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল হালিম।
১৯৯৯ সালে দুই দল জোটবদ্ধ হয়ে প্রায় এক যুগ পার করে ফেলার পর সম্প্রতি তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। জোট ভেঙে দেয়ার আলোচনাও তৈরি হয়েছে। দুই দলের নেতাদের একসঙ্গে এখন আর সেভাবে দেখা যায় না।
এর মধ্যে গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় পরস্পরের প্রতি দুই দলের যে অবিশ্বাস, সেটি প্রকাশ পেয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুর রহমান সেদিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির জন্য বিএনপির নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তেতে ওঠেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বলেন, ‘এই জামায়াত বাংলাদেশকে আজ এই জায়গায় এনেছে। এসবই জামায়াতের ফাইজলামি।’
সেই আলোচনায় ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। পরে দুই পক্ষে উচ্চস্বরে ঝগড়াঝাটি হয় আর বিএনপি নেতা মোশাররফ বেরিয়ে আসেন।
তবে কল্যাণ পার্টির আয়োজনে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে সেই দিনের বিবাদের কোনো রেশ দেখা যায়নি।
বিএনপি নেতা রিজভী কথা বলেন তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানোর ইস্যুতে। আর জামায়াত নেতা হালিম কথা বলেন, জাতীয় ঐক্য নিয়ে। তিনিও খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন।
রিজভী বলেন, ‘আইনমন্ত্রী প্রায়ই আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলেন। কিন্তু কোন আইনি প্রক্রিয়ায় জাস্টিস সিনহাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং জজকোর্টের জজ সাহেবকে প্রাণেরভয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে? এটার কোনো উত্তর দিতে পারেননি আইনমন্ত্রী।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আইন, জজ, বিচারক, প্রশাসন সব কিছু শেখ হাসিনার আঁচলে বন্দি। কোনো নিরপেক্ষ বিচার নেই। আপনি (আইনমন্ত্রী) বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে। যে মামলার কোনো সাক্ষ্য নেই, কোনো প্রমাণ নেই, অন্যায়ভাবে সেই মামলায় সাজা দিয়েছেন। এই অন্যায় সাজার কাছে বেগম খালেদা জিয়া মাথা নত করবেন না।’
জামায়াত নেতা হালিম বলেন, ‘আমরা সব সময় সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বাসী। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভক্তি এবং বিভাজনের রাজনীতি চলছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আজ দেশে জালিম সরকার রয়েছে। এর থেকে বাঁচতে হলে দল-মত নির্বিশেষে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উল্লেখ করে জামায়াত নেতা বলেন, ‘তার চিকিৎসা বিদেশে ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা বেগম জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কোরআন তিলাওয়াতের পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন। পরে ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বাসদের খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, ‘ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতায় থাকা সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তির তাড়নায় দেশবাসী ছটফট করছে।
‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন পাগলা ঘোড়া জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। বিজয়ের আনন্দ আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কোথায় সেই প্রাণচাঞ্চল্য? মানুষ এখন দুবেলা খাবার জোগাড়ের সংগ্রামে লিপ্ত।‘
সভা শেষে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া করা হয়।