আসন্ন পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পাবনার বেড়া উপজেলার কয়েকটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। কেউ মামলার আসামি, কেউবা আবার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্কিত।
সম্প্রতি প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর এ ব্যাপারে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিযেছে। বিক্ষুব্ধরা মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ২ ডিসেম্বর উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউপিতে মোস্তাফিজুর রহমান, নতুন ভারেঙ্গায় আমজাদ হোসেন, পুরান ভারেঙ্গায় এ এম রফিকুল্লাহ, কৈটোলায় শওকত ওসমান, চাকলায় ফারুক হোসেন, জাতসাকিনীতে আনোয়ারা আহমেদ, রূপপুরে আবুল হাশেম উজ্জল, মাসুমদিয়ায় শহিদুল হক, ঢালারচরে মমিনুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়ে তালিকা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড।
তবে এক দিন পরই ঢালারচর ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তন করে বর্তমান চেয়ারম্যান কোরবান আলী সরদারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এমন ঘটনা ঘটেছে আরও কয়েকটি এলাকাতেও। মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের অনেকেই জনবিচ্ছিন্ন, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ও হত্যা মামলার আসামি বলে নিশ্চিত করেছে দলীয় ও পুলিশের একাধিক সূত্র।
জানা যায়, ঢালারচর ইউপিতে প্রথমে মনোনয়ন দেয়া হয় ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমানকে। এক দিন পর ৩ ডিসেম্বর মমিনুর রহমানকে গহের হত্যা মামলার পলাতক আসামি উল্লেখ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের জন্য দলীয় সভানেত্রীকে চিঠি দেন পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর।
তাদের আবেদনে মনোনয়ন পরিবর্তন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কোরবান আলী সরদারকে মনোয়ন দেয়া হয়েছে। এতে মমিনের সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
মমিনুর রহমান বলেন, ’গহের হত্যা মামলার আসামি উল্লেখ করে মনোনয়ন বাতিল করা হলেও আমি সে মামলায় অভিযুক্ত নই। বরং মনোনয়নপ্রাপ্ত কোরবান সরদার ওই মামলার ১ নম্বর আসামি। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে আমাকে মামলায় জড়ানোয় মামলার বাদী অনেক আগেই আমাকে অব্যাহতি দিতে সিআইডিতে লিখিত পত্র দিয়েছেন। সিআইডিও তা আমলে নিয়েছে। কোরবান সরদার একজন বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অফিস না করে ইউনিয়নের বাইরে ১০ কিলোমিটার দূরে ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে পরিষদ পরিচালনা করেন। অসত্য তথ্য দিয়ে এমন জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তির জন্য সংসদ সদস্যদের সুপারিশের বিষয়টি দুঃখজনক।’
এদিকে মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে মাসুমদিয়া ইউনিয়নেও। বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরোজ হোসেনের পরিবর্তে এই ইউপিতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল হককে।
শহিদুল হকের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান থাকাকালীন সরকারি বরাদ্দের ২৩ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুদকের তদন্তে। স্থানীয় সরকার বিভাগে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক। দুদকেও মামলা চলমান। এমন বিতর্কিত ব্যক্তির মনোনয়ন অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া জাতসাখিনী ইউনিয়নে মনোনয়ন পাওয়া আনোয়ারা আহমেদ বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের ভুয়া পদবির তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নন বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ দুলাল।
তিনি জানান, আনোয়ারার দাবি করা পদে রয়েছেন শ্রীমতি সুষমা রাণী। আনোয়ারা দলের কেউ নন উল্লেখ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে সোমবার বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের সমর্থকরা।
তবে মনোনয়নবঞ্চিতদের অভিযোগ অসত্য দাবি করেছেন ঢালারচর, মাশুমদিয়া ও জাতসাখিনী ইউপিতে মনোনয়ন পাওয়া কোরবান সরদার, শহিদুল হক ও আনোয়ারা আহমেদ। যোগ্যতা বিচার করেই সংসদ সদস্যদের সুপারিশে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন।
মনোনয়ন পরিবর্তনের চিঠি দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর বলেন, ‘ঢালারচর ইউপিতে কোরবান সরদার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। দুর্নীতির অভিযোগ থাকতেই পারে, আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে দুর্নীতিবাজ বলা যায় না।’
ঢালারচরের গহের হত্যা মামলায় কোরবান সরদার প্রধান আসামি হওয়া সত্ত্বেও সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ফিরোজ কবীর বলেন, ’এখানে মামলার বিষয়টি মুখ্য নয়। সাংগঠনিক অবদান বিবেচনা করা হয়েছে।’