রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমান ধর্মের নামে মানুষকে ভুল পথে পরিচালনা করছেন বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটি রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা হয়েছে।
সিটিটিসির ইনভেস্টিগেশন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘রাজারবাগ দরবারের নিয়ন্ত্রণাধীন দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা, তাদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত বিভিন্ন বই, ইতোপূর্বে তাদের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন জেলায় তাদের অনুসারীদের কার্যক্রমের কারণে রুজুকৃত মামলা ও মামলাসমূহের তদন্তের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা ইসলাম ধর্মের নামে এবং অনেক ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের খণ্ডিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ দেশের ধর্মভীরু মানুষকে ভুল পথে পরিচালনা করে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ও তথাকথিত জিহাদকে উসকে দিচ্ছে।
‘এ দেশের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করছে ও কার্যক্রম চালাচ্ছে, রাজারবাগ দরবার শরিফের পির, তার সহযোগী ও অনুসারীদের কার্যক্রম জঙ্গিদের কার্যক্রমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।’
মতামতে আরও বলা হয়, ‘ভিন্ন ধর্মের মানুষকে, তাদের ভাষায় ‘মালাউনদের হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব’ উল্লেখ করে ফতোয়া দিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে কতল করার আদেশ দিয়েছে, যা মূলত বাংলাদেশের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মানুষকে হত্যা করার ফতোয়ার অনুরূপ। এটি ইসলামের নামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনসমূহের মতো একই প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মালম্বীদের হত্যা করার ও ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার কৌশল।
‘তাদের এ ধরনের বক্তব্য মানুষকে জঙ্গিদের দিকে ধাবিত করবে, অসহিষ্ণু করবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে।’
মতামতে উল্লেখ করা হয়, “তাদের প্রচারণা ও অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে মূলত তারা এ দেশের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসম্প্রদায়িক চেতনা এবং গণতন্ত্রবিরোধী একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠী তৈরি করতে চাচ্ছে। তা ছাড়া তারা ছোঁয়াচে রোগবিরোধী ও বাল্যবিবাহের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য ও ফতোয়া দিয়ে ধর্মভীরু ও সহজ-সরল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
“সার্বিক পর্যালোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তারা এখনও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত না হলেও তাদের বিভিন্ন প্রকাশনা, বক্তব্য, মুরিদ ও অনুসারীদের প্রতি তাদের নির্দেশনার ফলে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের এসব বক্তব্য ও প্রচার-প্রচারণা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের ‘লোন উলফ’ হামলায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে।”
এ প্রতিবেদন পড়ে আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রাজারবাগ পিরের কর্মকাণ্ডের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে নির্দেশ দেয়।
একই সঙ্গে সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছে, তারা প্রয়োজনে রাজারবাগ পিরসহ চারজনের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে।
পাশাপাশি সিআইডির প্রতিবেদনের আলোকে ভুক্তভোগীরা চাইলে রাজারবাগের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির ও এমাদুল বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আর রাজারবাগ পিরের পক্ষে ছিলেন এম কে রহমানসহ একাধিক আইনজীবী।