বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমপির সামনে ‘অপদস্ত’ ইউএনও, ‘লাঞ্ছিত’ ব্যাংক কর্মকর্তা

  •    
  • ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ১২:৫৪

অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানান, মহান বিজয় দিবসের আলোচনার শেষপর্যায়ে হঠাৎ এমপির উপস্থিতিতেই ব্যাংক ম্যানেজার রওশন জামিলকে গালিগালাজ করতে থাকেন চেয়ারম্যান মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ। এ সময় এমপিসহ উপস্থিত সবাই বিদ্যুৎকে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে বিদ্যুৎ এমপিকে উপেক্ষা করে গালিগালাজ করতে থাকেন। তাৎক্ষণিক ইউএনও নয়ন এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিদ্যুৎ। পরে তিনি ইউএনওর সঙ্গে তর্কে জড়ান।

গাইবান্ধার সংসদ সদস্য (এমপি) ও কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির উপস্থিতিতেই এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে গালিগালাজ ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করে ইউএনও বাগবিতণ্ডা ও জেরার মুখে পড়েন।

তবে ব্যাংক ম্যানেজারকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে উপজেলা চেয়ারম্যান। আর সংসদ সদস্য বলছেন, ঘটনাটি দুঃখজনক।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদ টাউন হলরুমে ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে। এদিন উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা চলছিল।

সভায় পলাশবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়নের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ি) আসনের এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতি, পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, পৌর মেয়র গোলাম সরোয়ার প্রধান বিপ্লব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর প্রধান ও সোনালী ব্যাংক পলাশবাড়ি শাখার ম্যানেজার রওশন জামিলসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানান, মহান বিজয় দিবসের আলোচনার শেষপর্যায়ে হঠাৎ এমপির উপস্থিতেই ব্যাংক ম্যানেজার রওশন জামিলকে গালিগালাজ করতে থাকেন চেয়ারম্যান মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ।

এ সময় এমপিসহ উপস্থিত সবাই বিদ্যুৎকে থামানোর চেষ্টা করেন। তবে বিদ্যুৎ এমপিকে উপেক্ষা করে গালিগালাজ করতে থাকেন। তাৎক্ষণিক ইউএনও নয়ন এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিদ্যুৎ। পরে তিনি ইউএনওর সঙ্গে তর্কে জড়ান।

সেদিনের অনুষ্ঠানের প্রায় দেড় মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। ভিডিওর শুরুতেই এমপি স্মৃতির সামনেই আঙুল তুলে ইউএনওকে শাসাতে দেখা যায় চেয়ারম্যান বিদ্যুৎকে। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সে (রওশন জামিল) ‘শয়তানের বাচ্চা’ আবারও বললাম- আপনি (ইউএনও) লেখেন আমার বিরুদ্ধে।’’

জবাবে ইউএনও বলেন, ‘আমি লিখব না তো; আমার ওতো হক নাই। সে তো একজন অফিসার। সে তো এমনি এমনি আসে নাই। তার বাবা বেঁচে আছে কি না- তাকে তুলে এভাবে (গালিগালাজ), এটা কী হয়।’

এভাবে চলা বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বলেন, ‘আপনার মতো বহু ইউএনওর সঙ্গে চাকরি করে আসছি। আমি পলাশবাড়িতেই থাকব।’

এ সময় নিজেকে সামান্য ইউএনও দাবি করে নয়ন বলেন, ‘আমি পলাশবাড়িতে হয়তো থাকব না। এটাই তো।’

তর্কের একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বলে ওঠেন, ‘এই নির্বাচনটাও (তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন) তো আপনার জন্য হারছে পলাশবাড়িতে।’

‘সেটা যদি; নৌকা মার্কায় ভোট দিতে পারেন দেন। এখানে আমার অনিয়মটা কোথায়।’ বলেন ইউএনও।

দীর্ঘ সময় ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের চলা বাগবিতণ্ডা বারবার থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন এমপি স্মৃতি। এ সময় তাদের তর্ক দাঁড়িয়ে শুনছিলেন অন্যরা।

মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় লাঞ্ছিত হওয়া ব্যাংক ম্যানেজার রওশন জামিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনার নিজের নামে (উপজেলা চেয়ারম্যান) একটা লোন প্রস্তাব ছিল ১৫ লাখ টাকার। উনি ব্যবসার ওপর এসএমই লোন চান। কিন্তু আদৌ উনার কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নাই।

‘এই লোনের বিপরীতে আমার ক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৪ লাখ। তবে প্রিন্সিপাল অফিস চাইলে দিতে পারে। কিন্তু তারাও প্রস্তাবটা ফেরত দিয়েছেন।’

ম্যানেজার বলেন, ‘আমিও তাকে সম্মানের সঙ্গে বলেছি, এটা তো এভাবে প্রসেস করা সম্ভব হচ্ছে না। তো এটাই উনার ক্ষোভ আর কী? এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ সেদিনের ঘটনা।’

বিজয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানের দিন কখন কীভাবে এ ঘটনার সূত্রপাত। এ প্রশ্নে রওশন জামিল বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানের শেষপর্যায়ে আমিসহ জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এমপি স্যারকে সালাম জানাতে তার কাছে যাই। সালাম দিয়ে আপার সঙ্গে কথা বলছিলাম- ঠিক এমন সময় হঠাৎ উনি (উপজেলা চেয়ারম্যান) গালিগালাজ শুরু করেন। বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার একটা শয়তানের বাচ্চা।’ কথাটা বারবার বলল। আমি তখনও আপার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’’

সবার সামনে আপনাকে গালিগালাজ দেয়ার পর কেউ প্রতিবাদ করেনি। এমন প্রশ্নে জামিল বলেন, ‘প্রথমে ম্যাডামই (এমপি) কথা ধরেছেন, বলেন- এই বিদ্যুৎ; তুমি কী বলছ এসব! থাম; কী হয়েছে, বিষয়টা শুনি। এর পরপরই ইউএনও স্যার কথা ধরেছেন।’

তবে ব্যাংক লোনের জন্য প্রস্তাব ও ব্যাংক ম্যানেজারকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বলেন, ‘আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নেই। আমি তো তার কাছে লোন চাই নাই। তার কাছে কোনো পেপার্স (ডকুমেন্ট) আছে; আমার লোন চাওয়ার।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ বলেন, ‘আমার তো তার সঙ্গে কিছুই হয়নি। উনি যদি একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটুকু না রাখেন; পলিটিক্স করতে চান! করুক। উনি তো চাকরিবাকরি করবেন না এলাকায়। পলিটিক্স করবেন- সমস্যা কী, করুক। আমি তো ওনাকে অপমান-অপদস্ত করিনি। ওনার গায়ে হাত দেইনি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাকে যা করা হয়েছে-সে বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নাই। তবে আমার মনে হয়েছে, একজন অফিসারকে এভাবে বলাটা ঠিক সমীচীন নয়- তাই আমি বলেছি (প্রতিবাদ)। আমার ধারণা, হঠাৎ করে রাগের মাথায় ঘটে থাকতে পারে ঘটনাটি।’

ইউএনও বলেন, ‘এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তাই এটা নিয়ে আমরা সবাই বিব্রত।’

ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, ‘এমন ঘটনা কখনই কাম্য নয়।’

এ বিভাগের আরো খবর