বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে শনিবার সকাল থেকে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আরও দুই থেকে তিনদিন টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। বলেছে, জাওয়াদের প্রভাবে বরিশাল অঞ্চলে তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
সাগর উত্তাল থাকায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে মাছ ধরার সব ট্রলার। দিনভর বৃষ্টির কারণে বরিশাল নগরীতে মানুষের আনাগোনাও ছিল কম।
ভোলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৬৯২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ভোলা-ঢাকা নৌ রুটের লঞ্চ ও ভোলা-লক্ষীপুর-ভোলা-বরিশাল ফেরিগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় চলাচল করছে। তবে সর্তক সংকেত বাড়লে এসব চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা।
ভোলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)র উপপরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’। ক্রমেই এটি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলে জাওয়াদের আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। তবে জাওয়াদের প্রভাবে রোববার ভোরে উপকূলীয় জেলাগুলোতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনভর মেঘলা থাকতে পারে আকাশ।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর দূরবর্তী সংকেত এবং নদী বন্দরে ১ নম্বর সংকেত জারি করা হয়েছে। জেলায় মানুষকে সচেতন করতে ১৩ হাজার ৬০০ সিপিপি ভলেন্টিয়ার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সতর্ক সংকেত বাড়লে উপকূলজুড়ে করা হবে মাইকিং।
ভোলা বিআইডব্লিউটি এর সহকারী পরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোলার সব রুটের নৌযান চলাচল এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। কর্তৃপক্ষ থেকে ঘোষণা আসলে বন্ধ রাখা হবে। ভোলা-লক্ষীপুর-ভোলা-বরিশাল ফেরিগুলো এখন স্বাভাবিক অবস্থায় চলাচল করছে।’
ভোলা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আবহাওয়ার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলে জাওয়াদের আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। এর প্রভাবে ৪ নম্বর সর্তক সংকেত দেখাতে বললে আমরা স্থানীয় জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে প্রস্তুতি সভা করব। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলা ভোলার ৬৯২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যাদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।’
জাওয়াদের প্রভাবে সকাল থেকেই বরগুনায় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সকাল ৯টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও কিছুসময় পর থেমে যায়। দিনভর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। শেষ বিকেলের দিকে ফের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত ঝড়ো বাতাস বা বজ্রপাত হয়নি।
সাগরে মাছ শিকাররত জেলেরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। তারা তীরের কাছাকাছি নিরাপদ অবস্থানে থেকে মাছ শিকার করছেন। এ ছাড়া বরগুনার বিষখালী বলেশ্বর ও পায়রা নদীর পানি সামান্য বেড়েছে। তবে তা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মাহতাব উদ্দীন।
সন্ধ্যা থেকে পটুয়াখালীতেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে দিনভর মেঘাচ্ছন্ন ছিল আকাশ। তার সঙ্গে গত কয়েকদিনের তুলনায় শীতের তীব্রতাও বেশি। সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩নম্বর সতর্ক সংকেত জারি হওয়ায় সাগরে মাছ ধরায় নিয়োজিত ট্রলারগুলো ফিরে আসতে শুরু করেছে।
বরগুনার আলীপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে ফিরতে শুরু করেছে ট্রলারগুলো। ইতোমধ্যে আলীপুর ও মহিপুর মৎস্যবন্দরে নোঙ্গর করেছে ট্রলারগুলো। তবে কিছু ট্রলার এখনও সাগরে আছে, যেগুলো রাতের মধ্যে ফিরে আসবে।
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ রানা জানান, সন্ধ্যা থেকে কিছু কিছু স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
পিরোজপুরে সকাল থেকে দেখা মেলেনি সূর্যের। সারাদিন থেমে থেমে হয়েছে বৃষ্টি। আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে নদ-নদীর পানি। জেলার কাউখালী, ইন্দুরকানী, মঠবাড়িয়াসহ কয়েকটি এলাকায় নদীর তীরে বেড়িবাঁধ না থাকায়, সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পিরোজপুর জেলা দুর্যোগ ব্যাস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আমরা আপডেট নিচ্ছি। এ বিষয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে রোববার বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জাওয়াদের প্রভাবে ঝালকাঠিতে শনিবার দুপুর থেকে থমথমে আবহাওয়া বিরাজ করছে। বিকেল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগ।
ঝালকাঠি জেলা দুর্যোগ ব্যাস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আবহওয়া পর্যাবেক্ষণ করছি। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঝড়ের সতর্কতা সংকেত বাড়ানো হলে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলার সব উপজেলায় সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন পটুয়াখালী থেকে জাকারিয়া হৃদয়, বরগুনা থেকে রুদ্র রুহান, ঝালকাঠি থেকে হাসনাইন তালুকদার দিবস ও ভোলা থেকে আদিল তপু।