বাসা থেকে বের হয়ে কিছু সময় পরই আবার ফিরতে চেয়েছিলেন কিশোর সাতরাজ উদ্দিন শাহিন। তবে তা আর হয়নি। ফিরেছে তার মরদেহ। সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা শামিমা আক্তার। বিলাপ করতে করতে যেন পাথর হয়ে গেছেন।
শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের খুলশীতে ডেমু ট্রেন, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং মাহিন্দ্রের সংঘর্ষে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবলসহ যে তিনজন নিহত হন তাদের একজন সাতরাজ।
সাতরাজের মরদেহ বাড়িতে নেয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা। নিউজবাংলার কাছে বলতে থাকেন, ‘আঁর পোয়া হদ্দে বিএনসিসির জরুরি হাজ, যনই পরিবো। হিতারা পাঁচজনেরে ডাইক্কি। হয়জে (বলছে), বই থাকক (বইগুলো এভাবে থাক), আঁই আইয়িনে পইত্তাম বস্সুম (পড়তে বসব)। যঅন আর আইয়্যুন শুধু (যাব আর আসব)। ওমা.... আঁর পোয়া বারেটার ভিতুর আইবো হই, ন আইলো আর।’
জানা যায়, সাতরাজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছিল। সোমবার ছিল তার পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা। এদিন সকালে বিএনসিসির জরুরি কাজে কলেজে যাচ্ছিলেন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর হামজারবাগের বাসা থেকে জিইসি হয়ে মাহিন্দ্রতে পাহাড়তলী কলেজের উদ্দেশে যাওয়ার পথে খুলশীতে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এ দুর্ঘটনায় নিহত হন সাতরাজসহ তিনজন। আহত হন অন্তত ছয়জন।
একমাত্র ভাইকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল ইসতিয়াক উদ্দিন সায়েম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে আম্মু, আমি আর ভাইয়া তিনটা রুটি দিয়ে নাস্তা করেছিলাম। আমি কোচিং থেকে আসার পর আরবি পড়তে বসি। এ সময় ভাইয়া পড়ছিলেন। কিছুক্ষণ পর দেখি ভাইয়া বাইরে যাচ্ছে। আম্মুকে বলছে ১২টার মধ্যে চলে আসব৷ ’
নিহত সাতরাজের মামা ইউসুফ সিদ্দিক আজম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই ভাইয়ের মধ্যে সাতরাজ উদ্দিন বড়। পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি দিচ্ছিল এবার। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সঙ্গে যুক্ত ছিল, বিএনসিসি এয়ার উইংয়ের ক্যাডেট আন্ডার অফিসার ছিল সাতরাজ। বিএনসিসির কাজেই কলেজে যাচ্ছিল সে।
‘চট্টগ্রাম শহরের হামজারবাগ এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতো৷ ওই এলাকায় বাবা ফজল করিমের একটি মুদি দোকান আছে। দোকানের আয় দিয়েই দুই ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন তিনি।’