চট্টগ্রামের খুলশী থানা এলাকার ঝাউতলায় ট্রেনের সঙ্গে তিন গাড়ির সংঘর্ষের ঘটনায় গেটম্যানের অবহেলাকে দায়ী করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঝাউতলা রেলগেটে ডেমু ট্রেনের সঙ্গে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রের সংঘর্ষে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন ছয়জন।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুজ্জামান শাহিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন ।
ঘটনাস্থলে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শীদের। তাদের দাবি, দুর্ঘটনার সময় দুই লেনের সড়কে এক লেনের গেটবার নামানো থাকলেও উন্মুক্ত ছিল অন্যটি। ঘটনাস্থলে ছিলেন না গেটম্যান। তার নাম আলমগীর।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঝাউতলা রেলগেটের পাশেই ছিলেন সাইলা বেগম নামে এক নারী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় জিইসিমুখী লেনের গেটবার নামানো ছিল না। সেখানে গেটম্যান আলমগীকে দেখা যায় নাই। অ্যাক্সিডেন্টের সময় অনেক আওয়াজ হইছে।
‘ষোলশহরের দিক থেকে ট্রেন আসতেছিল, জিইসির দিকে একটি বাস ঢুকে যাওয়ায় ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি রাস্তার দক্ষিণ লেনে এসে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও একটি মাহিন্দ্রকে ধাক্কা দিছে।’
জোছনা বেগম নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি রাস্তার দক্ষিণ দিকে রেললাইনের পাশেই ছিলাম, দূর থেকে অ্যাক্সিডেন্ট দেখে দৌড়ে এসে দেখি অনেকগুলো মানুষ কাটাছেঁড়া নিয়ে পড়ে আছেন। গেটম্যান কোথায় ছিলেন দেখিনি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কুলসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গেটম্যান আলমগীর সব সময় এখানে থাকেন না। ঘটনার সময়ও ছিলেন না।’
মিরাজ নামে এক কিশোর জানায়, ‘আলমগীর আংকেল রেল আসলে আমাকে সন্ধ্যায় পাঠাত প্রতিদিন, বলত একটা গেট বন্ধ করতে। অনেক সময় উনি থাকেন না, আমি নিজে নিজে বন্ধ করতাম।’
ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দীন জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রেলওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল গফুরকে প্রধান করা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলও ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের আলাদা কমিটি করেছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন এ তথ্য জানান।
দুই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ওসি নাজিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ বলছে গেটম্যান ছিল, কেউ বলছে ছিল না। তার বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা তদন্ত করবে।
‘গেটম্যান যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। তার হয়তো দায়িত্বে অবহেলা ছিল। ট্রেন চলে আসে রাস্তায়, তখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাস রেললাইনে উঠে পড়ে, তাতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
ওসি নাজিম দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেন। তারা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল মনির হোসেন। তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। বাকি দুজন হলেন নগরীর হামজারবাগ এলাকার সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ ও পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র সাতরাজ উদ্দিন।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, আহত ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।