রাজশাহীর রেলস্টেশন থেকে ভদ্রা মোড় পর্যন্ত রাস্তায় আছে বেশ কয়েকটি জেব্রা ক্রসিং। কিছুদূর পরপর রাস্তা পার হতে রাখা হয়েছে পকেট গেট।
ছোট এসব গেট জেব্রা ক্রসিংয়ের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে শুভ পেট্রল পাম্পের পাশে একটি জেব্রা ক্রসিং দেখা গেলেও রাস্তা পার হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিভাজক অংশে লোহার পাত, রড বসানো হয়েছে। মাঝখানে লাগানো হয়েছে গাছ। সম্প্রতি এই ক্রসিংয়ের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, কীভাবে এই জেব্রা ক্রসিংটি এলো সেটি তাদের অজানা।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেব্রা ক্রসিংয়ের এক পাশে কোনো স্থাপনা নেই। অন্য পাশে রয়েছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগ। রাস্তায় সাদা প্রলেপ দেয়া জায়গাটি থেকে এক পাশে প্রায় ২০ গজ দূরে আছে ছোট পকেট গেট। আরেক পাশে প্রায় ৫০ গজ দূরে আছে ইউটার্ন নেয়ার মতো রাস্তা। এ অবস্থায় সেখানে এই জেব্রা ক্রসিংয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আশরাফুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, ‘এখানে ক্রসিং দিয়ে চালকদের ধোঁকা দেয়া হয়েছে। কারণ এই চিহ্ন দেখলে যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়ার কথা। তবে রাস্তা পার হওয়ার তো ব্যবস্থা নেই। আমার মনে হয়, এটির কোনো প্রয়োজনই নেই। আবার যদি ক্রসিং দেয়াই হলো, তবে সেখানে পকেট গেট কেন রাখা হলো না।’
পথচারী ষাটোর্ধ্ব আবুল কাশেমকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রথমে তিনি হাসতে শুরু করেন। তিনি বলেন, এই পথ দিয়ে তিনি মাঝেমধ্যে যাওয়া-আসা করেন। তবে এভাবে তার নজরে আসেনি। এটি বড় কোনো ঘটনা না হলেও একটা ভুল। কর্তৃপক্ষের এটি নজরে নেয়া বা ভাবনা থাকা উচিত ছিল।’
৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নিজের ফ্যান পেজে পোস্ট করেন মাহফুজ আরেফিন নামে এক কৌতুকশিল্পী। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার বার। এতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ।
রহমান শিশির নামে একজন কমেন্টে লিখেছেন, ‘হাইজাম্প শেখার প্রয়োজনীয়তা থেকেই যে এটা করা হয়েছে তা কে বোঝাবে!’
মেরাজ মুহাম্মদ মেসবাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘কাজলা এবং মেইন গেটে স্পিড ব্রেকারের ওপর দিয়ে জেব্রা ক্রসিং দেয়া। মানে কী বলব বুঝতে পারছি না।’
নবিউল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘মুরগি দিয়ে হাল চাষ করলে এমনই হয়।’
পোস্টদাতা কৌতুকশিল্পী মাহফুজ আরেফিন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কমেডি রিয়েলিটি শো ‘হা-শোর’ সিজন পাঁচে অংশ নিয়েছিলেন।
নিউজবাংলাকে মাহফুজ আরেফিন বলেন, ‘আমি ওই রাস্তা দিয়েই নিয়মিত যাওয়া-আসা করতাম। দেখতাম জেব্রা ক্রসিং দিয়ে কেউ পার হচ্ছে না। সেখান থেকে ১০-১২ হাত দূর দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। সেটি দেখতে গিয়ে দেখি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সেখান থেকে ১০-১২ হাত দূরে পকেট গেট আছে।
‘আমার মনে হয়, সেখানে লোহার রড দিয়ে যে ডিভাইডার দেয়া হয়েছে, ভুলটা সেখানেই হয়েছে। যে গেটটি ১০ হাত দূরে করেছে, সেটি ক্রসিং চিহ্নর সামনে করলে এটা নিয়ে কথা উঠত না।’
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নজরে এসেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগেরও। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রসিংয়ের বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। এটি সিটি করপোরেশনের দেয়া জেব্রা ক্রসিং কিনা এটি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যতটুকু মনে হচ্ছে, এটি আমাদের করা নয়। এটি কে করেছে, কখন করেছে, কেন করেছে এসব আমরা খতিয়ে দেখছি।’
যে কেউ যে কোনো স্থানে ইচ্ছে হলেই জেব্রা ক্রসিং দিতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য প্রশাসন রয়েছে। এসব দেয়ার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হয়। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানার চেষ্টা করছি আদৌ সেখানে কোনো ক্রসিং দরকার আছে কি না। যদি থাকে তবে পকেট গেট করে দেব। আর না থাকলে ক্রসিং মুছে দেয়ার ব্যবস্থা করব।’