লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়া একটি মোবাইল কল রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযোগ, ভবানীগঞ্জ ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনির কর্মী রিয়াজ উদ্দিন মিজিকে ওই হুমকি দেন নৌকার প্রার্থী আবদুল খালেকের ভাতিজা আবদুল্লাহ আল মামুন রাব্বি।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রিয়াজের মোবাইলে রাব্বি কল দিলে এটি রেকর্ড করা হয়।
১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে রাব্বিকে বলতে শোনা যায়, ‘এই মিজি নিরে। মিজি, যদি আর একটা স্ট্যাটাস দেস নৌকার বিরুদ্ধে তাহলে তোরে বাড়িত তন ধরি আনি ক্রসফায়ার করিয়াম।
‘নৌকার বিরুদ্ধে কোনো স্ট্যাটাস দিলে ডাইরেক্ট আঁকি হালাইয়াম, তুই যিয়ানেই থাহস। তুই বাড়িত নি হেডা ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘তুই নৌকার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিবিতো, তুই মহানগর যুবলীগ করসতো, যুবলীগের নাম বেচস কেন? তুই বিএনপির লগে লিয়াজু করে আওয়ামী লীগের ফেস্টুন ভাঙস, এগিন মাইনসে জানে না?
‘বিএনপির লগে লিয়াজু করে যুবলীগের নাম বেচস। মারি হালাইয়াম, ডাইরেক্ট মারি হালাইয়াম।’
এ বিষয়ে রিয়াজ উদ্দিন মিয়াজি বলেন, ‘কল পেয়ে আমি রাব্বিকে সালাম দিয়েছি, কিন্তু রাব্বি শুরু থেকেই আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলে। প্রতিটি বাক্যে তিনি আমাকে গালাগাল করেছে।
‘আমাকে ক্রসফায়ার দেবে, মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে। নিজের জীবনের নিরাপত্তায় আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করব। আর আমি নৌকার বিরুদ্ধেও কোনো স্ট্যাটাস দেইনি।’
হুমকি দেয়ার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন আবদুল্লাহ রাব্বি। তিনি বলেন, ‘হুমকি তো দূরের কথা, আমি কাউকে কলই দিই নাই। আর কেনই বা হুমকি দেব। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। ওই কল রেকর্ডিং আমার না। আমার মোবাইল থেকে অন্য কেউও রিয়াজকে কল দেয়নি। রিয়াজ মামলা করুক, সমস্যা নেই।’
রাব্বি হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে-এমন দাবি করে শুক্রবার রাতে সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ৫ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। সেখানে রাব্বিকে অভিযুক্ত করেছেন প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশিদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি জানান, নৌকার প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার করছেন। পাশাপাশি তাদের হুমকিতে প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত। এ জন্য সব চেয়ারম্যান প্রার্থী সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
নৌকার প্রার্থী আবদুল খালেক বাদল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়, সেটা আমি জানি না। প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন।’
হুমকি দেয়া অডিওর বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের একটি অডিও আমি শুনেছি। ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না।’
চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ভবনীগঞ্জসহ সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে।