বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে গীতিকার বিজয় সরকারের বসতবাড়ি

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৫:৫১

বিজয় সরকারের নাতি বিভাষ চন্দ্র সিকদার বলেন, ‘কবির বসতভিটা এলাকায় বর্তমানে আমার পরিবারই বসবাস করছে। অন্যরা ডুমদি ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন অনেক আগেই। কবির বসতভিটা এবং বাসভবন দেখার কেউ নেই। মেঝের টাইলস ভেঙে গর্ত হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে এই ভবনটির বেশিরভাগ অংশ। খুবই এলোমেলো অবস্থা। থাকার-বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যান।’

‘এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’, ‘নবী নামের নৌকা গড়’, ‘আল্লাহ নামের পাল খাটাও’, ‘বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন’ কিংবা স্ত্রী বীনাপাণির মৃত্যুর খবরে ‘পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী’...এমনই অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা বিজয় সরকার।

প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কীর জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লিখেছেন ১৮ শর বেশি গান।

চারণ কবি হিসেবে পরিচিত এই সংগীত সাধকের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার। বার্ধক্যজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের এই দিনে কলকাতায় পরলোকগমন করেন তিনি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়।

বিজয় সরকারের জন্ম ১৩০৯ বঙ্গাব্দের ৭ ফাল্গুন নড়াইলের নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে। বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। তার দুই স্ত্রী বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউই বেঁচে নেই। সন্তানদের মধ্যে কাজল অধিকারী ও বাদল অধিকারী এবং মেয়ে বুলবুলি অধিকারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন।

মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই সুরস্রষ্টার মৃত্যুর ৩৬ বছরের মাথায় তার বসতভিটা এখন অবহেলায় নষ্ট হওয়ার পথে। ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে বিজয় সরকারের বাড়ি নড়াইল সদরের ডুমদিতে ভবন ও বিজয় মঞ্চ নির্মিত হলেও অযত্ন আর অবহেলায় দিন দিন তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেহালদশা বিজয় মঞ্চেরও।

বিজয় সরকারের বাড়িতে নির্মিত বিজয় মঞ্চের ভেতরের নোংরা অবস্থা

যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে কবির ব্যবহৃত খাটসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। এসব যেন দেখার কেউ নেই। এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে।

বিজয় সরকারের নাতি বিভাষ চন্দ্র সিকদার বলেন, ‘কবির বসতভিটা এলাকায় বর্তমানে আমার পরিবারই বসবাস করছে। অন্যরা ডুমদি ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন অনেক আগেই। কবির বসতভিটা এবং বাসভবন দেখার কেউ নেই।

‘মেঝের টাইলস ভেঙে গর্ত হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ভবনটির বেশিরভাগ অংশ। খুবই এলোমেলো অবস্থা। থাকার-বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যান।’

চারণ কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-আহবায়ক এসএম আকরাম শাহীদ চুন্নু বলেন, ‘কবিয়াল বিজয় সরকার বাংলার গর্ব। তাকে নিয়ে দুই বাংলায় কাজ শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকারের অবদান রয়েছে। তিনি কবিগান গেয়ে যে টাকা উর্পাজন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন।

‘তাই ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণকবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে কবির ব্যবহৃত খাট

নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য সচিব শরফুল আলম লিটুও স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় সরকারের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবি জানান।

বিজয়ভক্তদের দাবি, পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি তার গান পাণ্ডুলিপি আকারে সংরক্ষণ ও তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী জন্মভূমি নড়াইলের ডুমদিতে পালন করতে হবে।

নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, বসতভিটা রক্ষণাবেক্ষণসহ তার স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতি সংগ্রহশালা অথবা জাদুঘর নির্মাণ, সামাজিক পরিবেশসহ নানা উন্নয়ন করার বিষয়টি তারা চিন্তা করছেন।

এ বিভাগের আরো খবর