বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উন্নয়নশীলে টেকসই হওয়ার পথ খুঁজছে বাংলাদেশ

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:১০

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এই উত্তরণে অপেক্ষা করছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানা জটিল সমীকরণ। প্রস্তুতি হিসেবে সক্ষমতার ঘাটতি এবং তা দূর করার উপায় অনুসন্ধানে গবেষণার কাজ শুরু করেছে সরকার।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চূড়ান্ত সম্মতির পর বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট বড় কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখী না হলে ২০২৬ সালের পরই বিশ্ব দরবারে উন্নয়নশীলদের কাতারে স্থায়ী ঠাঁই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অঙ্গনে এই উত্তরণকে টেকসই করা না গেলে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুখোমুখী হতে হবে নানা জটিল সমীকরণের।

এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোথায় কোথায় সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে এবং তা দূর করতে উপায় কী হতে পারে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার।

এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেড সাপোর্ট মেজারস অনুবিভাগ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রভাবের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এতে সাত ধরনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা বা সক্ষমতার ঘাটতি শনাক্ত করা হয়।

এগুলো হচ্ছে:

০১. বাণিজ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা হারানো।

০২. মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের জন্য ক্রমান্বয়ে আমদানি শুল্ক হ্রাস।

০৩. কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা বা অন্যান্য প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ সঙ্কুচিত হওয়া।

০৪. প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা।

০৫. দক্ষ ব্যবস্থাপক তথা দক্ষ মানব সম্পদের ঘাটতি।

০৬. পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম ধরে রেখে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন।

০৭. দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বাইরে ডব্লিউটিওর আওতায় অন্যান্য সুবিধায় লাগাম।

সমীক্ষায় দাবি করা হয়, এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে ঘাটতি দূর করে উত্তরণের আগেই বাংলাদেশের পরিপূর্ণ সক্ষমতা অর্জনে যত দ্রুত সম্ভব এসব বিষয়ে গবেষণা এবং যত দ্রুত সম্ভব এ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আওতায় মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা যথাযথ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এই জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকেই এ সমীক্ষা চালানো হয়।

ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে গবেষণা প্রকল্প চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি দিয়েছে ট্রেড সাপোর্ট মেজারস অনুবিভাগ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সেলের মহাপরিচালক ও ট্রেড সাপোর্ট মেজার্স অনুবিভাগ প্রধান মো. হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। কিছু চ্যালেঞ্জ আমরা তাৎক্ষণিক উদ্যোগে মোকাবিলা করতে পারব না।

‘এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ লাগবে এবং তা হতে হবে খুবই সুদূরপ্রসারী ও পরিকল্পিত। সেখানে বিশ্ব বাণিজ্যের নানা জটিল মেরুকরণ এবং অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা উত্তরণে গবেষণালব্ধ পদক্ষেপ ছাড়া খুব বেশি এগোনো যাবে না। বাস্তবতার নিরীখে পদক্ষেপ নিতে না পারলে উত্তরণ প্রক্রিয়াটিও সুখকর হবে না। এ কারণেই গবেষণায় জোর দেয়া হয়েছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিহ্নিত বিষয়গুলোতে উন্নততর গবেষণা করা গেলে ওই গবেষণালব্ধ ফলাফল সক্ষমতা বাড়াতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে। গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ড অনুযায়ী দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দিয়ে এই গবেষণার কাজটি করা যায়, যেখানে অর্থনীতিবিদ, বাণিজ্য বিশ্লেষক, কূটনীতিক, প্রযুক্তিবিদ ও পরিকল্পনাবিদরা অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারেন।’

কেন এই সক্ষমতার অভাব

বিশ্বজুড়ে তৈরি পোশাকের অন্যতম কাঁচামাল ছিল তুলা বা সুতা। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন তার জায়গা দখলে নিয়েছে এক ধরনের কৃত্রিম তন্তু।

সময়ের এই চাহিদাকে লুফে নিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। তারা তুলা বা সুতার পরিবর্তে কৃত্রিম তন্তু দিয়েই বিভিন্ন পোশাক পণ্য উৎপাদন করছে।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় হলেও এখন পর্যন্ত কৃত্রিম তন্তু দিয়ে পোশাক পণ্য উৎপাদনের কোনো প্রযুক্তি দেশে আনতে পারেনি। এমনকি গড়ে ওঠেনি এর কোনো পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পও। এ দুইয়ের অপ্রতুলতার কারণে দেশের উদ্যোক্তারা কৃত্রিম তন্তু দিয়ে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি কোনোটাই করতে পারছে না।

অপরদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন কারখানায় সিনিয়র ও মিডল ম্যানেজমেন্টে অনেক বিদেশি নাগরিক কর্মরত আছেন।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বিভিন্ন স্তরের ঊর্ধ্বতন ও মধ্যবর্তী ব্যবস্থাপক পদে ১ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। এরা তাদের দক্ষতার মাধ্যমে প্রতি বছর দেশ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল থাকলে এ বিপুল অর্থ বিদেশে চলে যাওয়া যেমন এড়ানো যেত, পাশাপাশি এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি আরও বড় হতে পারত।

অপরদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, উত্তরণ পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে পাওয়া শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা আর থাকবে না। এর ফলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শুল্ক বাড়বে। এতে দেশের রপ্তানি খাত নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাত্রা শুরুর পরপরই বাংলাদেশকে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ), প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) এবং রিজিওনাল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (আরটিএ) এর মতো বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। তখন ক্রমান্বয়ে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে।

এছাড়া, একই সঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা দেয়ার সুযোগও সংকুচিত হয়ে আসবে।

যে কারণে গবেষণায় জোর

বাজার সুবিধা না থাকা, আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়ার রেওয়াজ সঙ্কুচিত হওয়া- এই ত্রিমুখী প্রতিকূলতার মুখে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ কী হবে, তা অনুসন্ধান করতে গবেষণা ছাড়া বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উৎপাদনে সক্ষমতা যাচাইয়ে তৈরি পোশাক ছাড়া কোন কোন পণ্যে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলক দামে বাংলাদেশে উৎপাদন করা যায় এবং কী ধরনের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে বাংলাদেশ তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে, তা যাচাই সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বের করার জন্যেও গবেষণা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদিত পণ্যসকে কীভাবে আরও বেশি রপ্তানিমুখী করা যায়, তার ওপর তেমন কোনো গবেষণা নেই।

একইভাবে উত্তরণের পর সার্ভিস সেক্টরে এর প্রভাব সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট ধারনা পেতে চান সংশ্লিষ্টরা।

কৃষিখাতে বর্তমানে দেয়া বিভিন্ন প্রণোদনা ও নীতি সুবিধা হ্রাস করতে হলে কৃষিখাতে এর প্রভাব কেমন হবে নিরূপণ করতে হবে।

কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প স্থাপন ও প্রযুক্তি আমদানি সহ ঘাটতি অন্যান্য খাতগুলোয় কীভাবে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যায় এবং এ বিষয়ে কোন ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া যায়, সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে উপায় খোঁজ করাও হবে এসব গবেষণার উদ্দেশ্য।

এ বিভাগের আরো খবর