দেশের শিশুশ্রম আইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না শিশুদের। তবে মানিকগঞ্জের ইটভাটাগুলোয় সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে চলছে শিশুশ্রম।
পরিবারের আর্থিক সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিশুদের দিয়ে ইট বানানো থেকে শুরু করে পোড়ানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ নানা কাজ করাচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা।
প্রশাসন দায়সারাভাবে বলছে, শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে জানা যায়, সাত উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ১৪৭টির মতো। এর মধ্যে অবৈধ ভাটা ১৯টি।
কয়েকটি ভাটা ঘুরে দেখা যায়, ইট বানানো, পোড়ানো, শুকানো ও ভ্যানে করে তা আনা-নেয়ার কাজ করছে শিশুরা।
এ ছাড়া ভাটায় মা-বাবার সঙ্গে আসা শিশুরা খেলাধুলা করছে ময়লা-আবর্জনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শিশু সাকিবুল ইসলাম বলে, ‘গত বছর ক্লাস সেভেনে পরীক্ষা দিচি। বাবায় টাকা না দেয়ায় আর পড়ালেখা করতে পারি নাই। তাই এইবার বাবার সঙ্গে ইটভাটায় আইছি। ইট বানাতে পারি না তো, তাই শুকনা ইট ভ্যানে করে টানাটানি করি।’
মানিকগঞ্জের ঘিওরের আজমত মিয়া বলে, ‘অভাবের কারণে সংসার চলতেছে না। বাবা বুইড়া হয়ে গেছে। কাম-কাইজ করার পারে না। ঠিকমতো সংসার চলে না। তাই এইবার ভাটায় আইছি। আমরা তো গরিব মানুষ। অভাব না থাকলে কী আর ভাটায় আসি?’
শিবালয়ের আতিকুল ইসলাম জানায়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে সে। এরপর এলাকায় ঘুরে বেড়াত। পরে ইটভাটার মালিক আর সরদার তাকে ভাটায় কাজ করতে বলেন।
শিবালয়ের এবিসি ইটভাটার মালিক আফতার উদ্দিনের অবশ্য দাবি, ইট বানানো থেকে পোড়ানো সব বড়রা করে। ভাটায় শিশুরা কাজ করে না। তবে অনেক সময় মা-বাবার সঙ্গে আসা শিশুরা শখ করে কাজ করে। তবে তারা তাদের নিষেধ করেন। শ্রমিকের বিষয় সরদার ভালো বলতে পারবেন।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূর আলম বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আমরা প্রশাসনের সহায়তায় কাজ করি। আর শিশুশ্রম আইনের বিষয়ে প্রশাসন ভালো বলতে পারবে।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মাদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘যদি কোনো ইটভাটায় শিশুশ্রম ব্যবহার হয়, তা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা প্রতিকারের চেষ্টা করা হবে।’