বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২১ যুবকে হানাদারমুক্ত হয় বরগুনা

  •    
  • ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১১:১৫

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ কোনো দিন ভোলার নয়। শ্রদ্ধা অবনত চিত্তে তাদের যুগ যুগ ধরে স্মরণ করে যেতে হবে আমাদের। তবে শহীদ পরিবারকে ভাতা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। তবুও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা কথা বলবো।’

পাকিস্তানি হানাদারদের প্রকাশ্যে গুলি করে ২১ জন যুবক মুক্ত করেন বরগুনা। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে বরগুনায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল হানাদাররা।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন তরুণ ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ফজরের আজানকে টাইম কোড ধরে এক যোগে গুলি করে দখলে নেন বরগুনা থানা।

এ সময় শামসুল হক রাজাকার ওরফে শামসু রাজাকার নিহত হন। গণ আদালতে বিচারের পর ফায়ারিং স্কোয়াডে বরগুনার কুখ্যাত রাজাকার আজিজ মাস্টার, হোসেন মাস্টার, মোতালেব মাস্টার ও আজিজ কেরানিকে হত্যা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরগুনার বিভিন্ন থানা ও তৎকালীন মহাকুমা সদরে পাকবাহিনী অবস্থান নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। সময়ের ব্যবধানে কয়েক মাসের মধ্যে জেলার মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন।

বরগুনা, বামনা, বদনীখালী ও আমতলীতে যুদ্ধের পরে পাকবাহিনীর সদস্যরা বরগুনা ট্রেজারি, গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলো এবং জেলখানা ও থানায় অবস্থান নেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া সাবসেক্টরের অধীনে। বুকাবুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা ২ ডিসেম্বর রাতে বরগুনা বেতাগী থানার বদনীখালী বাজারে আসেন।

রাত তিনটার দিকে আবদুস সাত্তার খানের নেতৃত্বে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা নৌকা করে বরগুনার খাকদোন নদীর পোটকাখালী এলাকায় অবস্থান নেন। পরে রাতেই কারাগার, ওয়াপদা কলোনি, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারলেস স্টেশন, এসডিওর বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি উপবিভাগে ভাগ করে ফজরের আজানকে টাইম কোড করে এক যোগে ছয়টি স্থান থেকে হামলা করেন।

এ সময় দলনেতা সাত্তার খান ছিলেন কারাগার এলাকায়। তিনি জেলখানায় অবস্থান নেয়া পাকপুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে এসডিও অফিসের সামনে নিয়ে আসেন।

দুপুর ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনিক দায়িত্ব এসডিওকে সাময়িকভাবে বুঝিয়ে দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বুকাবুনিয়া সাব-সেন্টারে চলে যান।

মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন মনোয়ার বলেন, ‘একাত্তরের সেই রণাঙ্গনের কথা মনে পড়লে আজও আমাদের চোখে পানি এসে যায়। মাত্র ২১ জনের একটি দল নিয়ে আমরা বরগুনাকে মুক্ত করেছিলাম।’

মুক্তিযোদ্ধা সুখরঞ্জন শীল জানান, বরগুনার গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলোয় নারীদের ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন চালাত হানাদাররা। ১৯৭১ সালের ২৯ ও ৩০ মে স্থানীয়দের বন্দী করে জেলখানায় নিয়ে গণহত্যা চালায়। লাশের স্তুপ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় অধিবাসী কেস্ট ডাক্তারকে কোদাল দিয়ে নৃসংশভাবে পিটিয়ে হত্যা করে রাজাকাররা।

মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘শহীদদের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। কিন্তু শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের অভাব অনটন দেখে কষ্ট লাগে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, তিনি যেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ভাতার ব্যবস্থা করেন।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ কোনো দিন ভোলার নয়। শ্রদ্ধা অবনত চিত্তে তাদের যুগ যুগ ধরে স্মরণ করে যেতে হবে আমাদের। তবে শহীদ পরিবারকে ভাতা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। তবুও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা কথা বলবো।’

এ বিভাগের আরো খবর