বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নালা নাকি মারণফাঁদ

  •    
  • ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:২৭

চট্টগ্রাম শহরে উন্মুক্ত নালা ও খালে পড়ে গত চার মাসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেছে। তারপরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পের কাজে নালা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে আছে বেশির ভাগ নালা। এসব খোলা নালা-খাল নগরবাসীর মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

উন্মুক্ত এসব নালা ও খালে পড়ে গত চার মাসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেছে। তারপরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।

সবশেষ নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় হল-২৪ কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীত পাশে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নালায় পড়ে ইয়াসির আরাফাত নামের এক কলেজছাত্রের পা ভেঙেছে। আহত ইয়াসির চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত ৩০ জুন চশমা খালে যাত্রীবোঝাই সিএনজি ট্যাক্সি পড়ে দুজন নিহত হয়। ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ নিখোঁজ হন। তার মরদেহ পাওয়ার জন্য যখন পরিবার আকুতি জানাচ্ছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়া।

এর আগে মোহাম্মদ আলী রোডে নালায় পড়ে মারা গিয়েছিলেন একজন। গত বছর হালিশহর ইসলামিয়া ব্রিক ফিল্ড এলাকায় মহেশখালে পড়ে দুই কিশোরীর মৃত্যু হয়।

শহরের বুকে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নগরবাসী।

নগরের বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ বেলাল অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনো বাসযোগ্য শহরে নালায় পড়ে এভাবে একের পর এক মৃত্যু হতে পারে না। এটি মেনে নেয়া যায় না।’

এভাবে খোলা নালা ও খালে পড়ে মানুষের মৃত্যু হলেও এসব ঘটনায় দায় স্বীকার করছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- সিডিএ। নালা-নর্দমায় পড়ে একের পর এক হতাহতের ঘটনায় পরস্পরকে দুষছে সংস্থা দুটি।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, প্রকল্প পরিচালনায় সিডিএর ব্যর্থতার কারণে এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে।

অন্যদিকে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলছেন, নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা ও তার ওপর স্ল্যাব দেয়া সিটি করপোরেশনের কাজ। এভাবে দোষারোপ করে দিন দিন সমস্যাটি জিইয়ে রাখলে মানুষের দুর্ভোগ ও হতাহতের ঘটনা, উভয়ই বাড়বে।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৯৪৬ কিলোমিটার নালা রয়েছে। তবে কতটুকু নালার ওপর কয়টি স্ল্যাব রয়েছে, তার তথ্য নেই। ৫৭ খালের মোট দৈর্ঘ্য ১৬১ কিলোমিটার। এসব খালের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নেই নিরাপত্তাবেষ্টনী।

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ২০১৮ সাল থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। খোলা নালায় খেলাধুলা করতে করতে শিশুদের পড়ার ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকও একটু অসতর্ক হলেই পড়ে যাচ্ছেন। এরপরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।

সচেতন নাগরিক কমিটি, চট্টগ্রামের সভাপতি আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে যেভাবে মানুষ মারার ফাঁদ তৈরি হয়ে আছে, তার দায় কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আমরা চাই, অবিলম্বে চট্টগ্রামে খাল ও নালা চিহ্নিত করে এর পুরো অংশে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব বসানো হোক।’

তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বাভাবিকভাবে নগর পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংস্থার পরস্পরবিরোধী অবস্থান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের গতিকে ব্যাহত করছে।’

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘নালা কিংবা খালে পড়ে প্রায়ই এসব ঘটনা ঘটছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। জলাবদ্ধতা নিরসন কিংবা ফ্লাইওভার– যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সেফটি সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে।

‘যে কর্মকর্তা কিংবা প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এসব ঘটনা ঘটছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা কিংবা বিচারের আওতায় আনা দরকার।’

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, বর্তমানে খাল ও নালাগুলোর পাশে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে যেসব এলাকায় মানুষের বসতি ও যাতায়াত রয়েছে, সেখানে দুর্ঘটনা এড়াতে খালের সঙ্গে লাগোয়া রাস্তায় রেলিং দেয়া হবে। নালাগুলোর ওপর স্ল্যাব দেয়া হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর