যে শিক্ষার্থী যে বিভাগেই পড়ুক প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার অনুরোধ তোমরা যে যেই বিভাগেই পড়না কেন তোমরা প্রত্যেকেই ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন কর। তোমরা যেন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পার।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আলোচনা পর্বের সূচনা হয়।
সভায় মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার জানতে হবে। যে যত কথাই বলুক ইন্টারনেট ব্যবহার করাও একটি ডিজিটাল দক্ষতা। এই দক্ষতা তুমি অর্জন করবে তবে অপব্যবহার করবে না। এটা তোমাদের জন্য একটা সুযোগ। তোমরা নিঃসন্দেহে সেটি কাজে লাগাবে। এই জন্য কিন্তু তোমাদের প্রোগ্রামার বা বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। তোমাদের মেধা দক্ষতার ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা সেই দেশের মানুষ যে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী। সেই সংগ্রামের উত্তরাধিকারী। ছাত্র বন্ধুদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন উত্তরাধিকারীর মত আচরণ করি। উত্তরাধিকারী তার উত্তরাধিকারকে পুঁজি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে না বরং উত্তরাধিকারকে আরও সমৃদ্ধ করে। শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ আপনারা শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা দিবেন।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন যে সুযোগ সুবিধা আছে তা কিন্তু বিশ-ত্রিশ বছর আগে ছিল না। তবুও সেসময় আমাদের অনেক গুণী শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে অনেক ভালো গবেষণা হয়েছে। এখন আমাদের কিন্তু ফান্ডের অভাব নেই। আমরা যদি নিজেদের একটু আত্মসমালোচনা করি আগের স্বল্প সুবিধা নিয়ে যে মানের গবেষণা হতো এখন আমরা তা পারছি কিনা । আমার মনে হয়, এখন সময় এসেছে সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে বেশি নজর দেয়া।’
সভাপতির বক্তব্যে ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ নিরলসভাবে জ্ঞান চর্চা এবং সৃষ্টির সাধনায় নিয়োজিত আছে। তারপরও মাঝে মাঝে কথা উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে যে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই নেতৃত্বের স্থান ধরে রাখতে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। গতকাল যে উৎসাহ উদ্দীপনায় শতবর্ষের অনুষ্ঠান হয়েছে তাতে আমি আশাবাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্জাগরণের জন্য এটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার একটাই প্রত্যাশা, আগামী শতাব্দীতে আমরা যেন জাতিকে আরও ভাইব্রান্ট, আরও ক্রিয়েটিভিটি এবং হিউম্যান ভ্যালুসসহ রিচ সোসাইটি উপহার দিতে পারি সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করবো।
এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘একটি দেশে কত বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো বৈশ্বিক অবস্থানে কতটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।’
আর এ জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান এই ইমেরিটাস অধ্যাপক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই পর্বে উপস্থাপনা করবেন নাহিদ আফরোজ সুমি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ সংগীত পরিবেশন করেন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সূবর্ণা মোস্তফা, নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়।
এছাড়া অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ইয়াসমিন মোস্তারী, কুমার বিশ্বজিৎ এবং ফাহমিদা নবী অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের কথা রয়েছে।