বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেতু আছে খাল নেই

  •    
  • ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:২৩

খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা লিটন বেপারি বলেন, ‘আমাগো কাগজপত্র আছে। নিজেগো জায়গায়ই ঘর তুলছি। খালের জায়গা রাইখ্যা আমরা ঘর উডাইছি। দোকানঘরের সামনে যে খাল ছিল অহন সবাই ভইরা হালাইছে, তাই আমরাও ভরছি।’

শরীয়তপুর জেলা শহরের উত্তর বাজার থেকে কোটাপাড়া পর্যন্ত সড়কের পাশে চোখ দিলে দেখা যাবে শুকনো ভূমির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে একের পর এক সেতু। গুনলে পাওয়া যাবে সাতটি, অথচ কোনো সেতুর নিচে পানি দূরে থাক, নিচু ভূমিরও অস্তিত্ব নেই।

স্থানীয়রা জানায়, জেলা শহরের মধ্য দিয়ে একসময় প্রবাহমান পালং-কোটাপাড়া খালের ওপর ছিল সেতুগুলো। এক যুগ ধরে খালটির প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা, আধাপাকা স্থাপনা ও সংযোগ সড়ক।

খাল ভরাট হওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে চরপালং ও কোটাপাড়া এলাকার কৃষিতে। এ ছাড়া এক যুগের বেশি সময় ধরে বর্ষা মৌসুম এলেই শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।

শরীয়তপুর পৌরসভা থেকে খালটি উদ্ধারে বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।

এতে ভেঙে পড়েছে পৌর শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আবার দীর্ঘমেয়াদে পানি জমে থাকায় অনাবাদি থেকে যাচ্ছে এসব এলাকার শত শত একর জমি।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশ দিয়ে পালং উত্তর বাজার থেকে কোটাপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট-বড় এসব সেতু। তবে সেতুগুলোর কোনো প্রান্তেই খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রেমতলা, কোটাপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, চরপালং, ফায়ার সার্ভিস ও চেম্বার অফ কমার্সের সামনে থাকা প্রত্যেকটি সেতুর নিচের পুরোটা ভরাট হয়ে গেছে। খাল ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বাণিজ্যিক পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা। খালের পাশে থাকা বিপণিবিতানে যাতায়াতের জন্য ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক।

শরীয়তপুর পৌরসভা থেকে জানা যায়, জেলা শহরের পয়োনিষ্কাশন, নৌপথে যোগাযোগ ও কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে কীর্তিনাশা নদীর সঙ্গে সংযোগ করে অন্তত ৪০ বছর আগে খনন করা হয় পালং-কোটাপাড়া খালটি। ২০ বছর আগেও প্রবাহমান খালটির ওপর নির্ভর করে জীবিকা চলত স্থানীয় অনেকের।

তবে গত ২০ বছরে ধারাবাহিকভাবে ভরাট করা হয়েছে খালটির সম্পূর্ণ অংশ। এখন শুধু সেতুগুলো ছাড়া কোথাও খালের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ভেঙে পড়েছে পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা খালটির আশপাশের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। চরপালং, কোটাপড়াসহ ওই এলাকার ফসলি মাঠ পানির নিচে তলিয়ে থাকে সারা বছর।

চরপালং এলাকার মো. জয়নাল বলেন, ‘এই জমিতে আমরা সব জিরাত লাগাইতাম। ধান, শৈষ্যা, গম, মুহুরি, আবোর ইরি ব্লকও করতাম। অনেক বছর ধইরা জমির পানি নামে না। জিরাতও করতে পারি না।’

‘হুদাহুদি জমি পইরা রইছে। আর বৃষ্টি-বাদলের সময় পানি বাইড়া ঘরের তোন রাস্তাও যাইতে পারি না। সব পানিতে তলাইয়া যায়। খালডা থাকলে আর এমন অইতো না।’

খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা লিটন বেপারি বলেন, ‘আমাগো কাগজপত্র আছে। নিজেগো জায়গায়ই ঘর তুলছি। রেকর্ড, পরচাসহ সব ধরনের কাগজপত্র আছে। সরকারি খালে দোকান উডাই নাই। খালের জায়গা রাইখ্যা আমরা ঘর উডাইছি। দোকানঘরের সামনে যে খাল ছিল, অহন সবাই ভইরা হালাইছে, তাই আমরাও ভরছি।’

শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জানান, পৌর শহরে থাকা ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া সাতটি খালকে চিহ্নিত করে জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো উদ্ধারের জন্য চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বকে আহ্বায়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

এরপর করোনা মহামারি ও বিভিন্ন আইনি জটিলতায় উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি। দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা না গেলে পৌর শহরের জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়ে যাবে।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, ‘জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা শহরে দখল হয়ে যাওয়া খালের তালিকাসহ বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

‘এ ছাড়া দখলদারদের নাম, পরিচয় এবং দখলীয় সম্পত্তির বিবরণ চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। আগামী সভায় এসব তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার কথা রয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য অভিযান চালানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর