ভাঙাচোরা আর এবড়োখেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে উঠতে হয় সেতুতে। কংক্রিটের তৈরি সেতুর অবস্থা জরাজীর্ণ। এর বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী পয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় পারাপারের জন্য সেতুর ওপর বাঁশ বেঁধে দিয়ে গর্ত ভরাট করা হয়েছে।
মাদারীপুরে সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর গ্রামের সেতু এটি। প্রায় ১০ বছর ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সেতুর ওপর দিয়েই প্রায় ৫ বছর ধরে গ্রামের শিশু, কিশোর, বৃদ্ধসহ ৮ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার সেতুটি পুনর্নির্মাণের আশ্বাস দিলেও দুর্ভোগ লাঘবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে খোয়াজপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চর গোবিন্দপুর গ্রামের চর গোবিন্দপুর ইউকে উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন খালের ওপর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত সেতুতে প্রায় ১০ বছর আগে ফাটল দেখা দেয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে পলেস্তারাও খসে পড়তে শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ সেতু নির্মাণের ফলে ইউনিয়নের ফরাজীকান্দি, মাঝেরকান্দি, মাদবরকান্দি, ডিগ্রি খোয়াজপুর, ভসারচরসহ ৭ গ্রামের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। তবে পলেস্তারা খসে পড়তে পড়তে সেতুর অন্তত ৫টি স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে বর্তমানে সেতুটি মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এর ওপর দিয়েই স্থানীয়রা মাদারীপুর শহর, স্থানীয় হাটবাজার গোবিন্দপুর ইউকে উচ্চ বিদ্যালয়, ৩৬ নম্বর চর গোবিন্দপুর উত্তরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিয়াচান দাখিল মাদ্রাসা, হাবিবা ইসলাম নূরানী মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছেন।
এ সময় এলাকার স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার জানানোর পরও সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চলাচলে বিকল্প আর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ৫ বছর ধরে সেতুর গর্তের ওপর বাঁশ বেঁধে দিয়ে কোনো মতে হেঁটে চলাচল করছেন তারা। এ ছাড়া মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নিতে হলেও চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের।
স্থানীয়রা আরও জানান, এভাবে সেতু পার হতে গিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে এ পর্যন্ত ৩ স্কুলশিক্ষার্থীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। সেতুটি পুনর্নির্মাণ করতে ৩ মাস আগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মাটি পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হলেও এখনও সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
৩৬ নম্বর চর গোবিন্দপুর উত্তরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলের সময় আমাদের অনেক ভয় লাগে। তবে স্কুলে আসতে হলে এভাবেই আসতে হবে, তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করি।’
চর গোবিন্দপুর ইউকে উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সোবাহান বলেন, ‘এই সেতু দিয়ে স্কুলে আসার সময় গত বছর আমার এক সহপাঠী গর্ত দিয়ে নিচে পড়ে পা ভেঙে গেছে। এখানে আমরা দ্রুত নতুন একটি সেতু চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান মীর বলেন, ‘কয়েক বছর ধইরা আমরা ঝুঁকি নিয়া এই সেতু দিয়া হাঁটাচলা করি। হাটবাজারে যাই, শহরে যাই, হাসপাতালে যাই, পোলাপাইন স্কুলে যায়। অনেকবার চেয়ারম্যানকে বলার পরও ব্রিজটা কইরা দেয় নাই। এখন সরকারের কাছে আমাগো একটাই দাবি, এই ব্রিজটি যেন তাড়াতাড়ি কইরা দেয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল মুন্সি বলেন, ‘এই সেতু দিয়ে অন্তত ৭ গ্রামের ৮ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। আমরা নিজেরা মিলে ৫ বছর ধরে এভাবে বাঁশ বেঁধে সেতুর ওপর দিয়ে চলাফেরা করলেও দেখার মতো কেউ নেই। আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।’
এ বিষয়ে খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুন্সি বলেন, ‘সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য অনেক আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তিন মাস আগে মাটির পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। যেকোনো সময় অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি, শিগগির সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুনর্নির্মাণে আমরা পরিদর্শন করেছি। বরাদ্দ পেলেই নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’