বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দুই নারীর একজন তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী ছিল বুধবার। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় তার।
রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে কোনো আয়োজনই করা হয়নি। পারিবারিকভাবে মিলাদ মাহফিলেই শেষ হয়েছে তার মৃত্যুবার্ষিকী।
বীরপ্রতীক তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের বলেন, ‘আজ আমার মায়ের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। অথচ ঘরোয়াভাবে পালন করতে হচ্ছে আমাদের। সরকারি-বেসরকারি এমনকি কোনো সামাজিক সংগঠনও মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি নেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে রাজীবপুর উপজেলায় কাচারীপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে মা মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ পারিবারিকভাবে সন্ধ্যায় দোয়া অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এতিমদের খাওয়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার গুচ্ছপাড়া গ্রামের বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।’
বীরপ্রতীক তারামন বিবির ভাই হাসান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘যখন বুবু বেঁচে ছিল, তখন সরকারের লোক, দলীয় লোক এবং মুক্তিযোদ্ধারা অনেক খোঁজখবর নিয়েছিল, কিন্তু আজ বুবুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী হতে চললেও কেউ ফোন দিয়ে খবর নেয় না।
‘আমার নিজেরও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। তাই তেমন কিছু করতে পারি না। সামর্থ্য যা হয় তাই দিয়ে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করি।’
তারামন বিবি ছিলেন রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সোবহানের সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৃতীয় কন্যাসন্তান। তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রান্না করতেন ১৪ বছরের তারামন বিবি। রান্না করতে করতে অস্ত্র চালাতে শেখেন তিনি। তারপর রান্নার খুন্তি ফেলে রাইফেল হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন সম্মুখ সমরে।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হলেও সে কথা তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর জানতে পারেননি।
ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী এবং রাজিবপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকীর সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেয়া হয়।
রাজীবপুরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার জানান, বীরপ্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্তী জানান, বীরপ্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনিসহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো, ওসি মজাহারুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলাল হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুস সবুর ফারুকীসহ কয়েকজন তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।