নানা সময় নেয়া নানা উদ্যোগ রাজধানীর সড়ককে নিরাপদ ও আরামদায়ক করতে পারেনি উল্লেখ করে এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও সমন্বিত একটি পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের দুর্ঘটনাস্থলে পথচারী পারাপার সেতু (ফুটওভার ব্রিজ) নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন শেষে বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘আমাদেরকে বিশেষজ্ঞ মহলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট প্লানিংয়ের মাধ্যমে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করতে হবে। শুধুমাত্র একটা কিছু করে ফেললে তা কাজে দেবে না।
‘আমরা চাই কার্যকর ব্যবস্থা। যত দিন যাবে এই এলাকায় যান চলাচল ততই বাড়বে। তবে এখানে আমরা যেটাই (স্থাপনা) করি, সেটাই আমাদের মেধাবী ছাত্র নাঈম হাসানকে উৎসর্গ করব।’
যে এলাকায় নাঈম মারা গেছেন, সেখানে পথচারী পারাপারে দুই যুগেরও বেশি সময় আগে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই পথ দিয়ে পথচারীরা পারাপার হয় না বললেই চলে। তারা সড়কের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হন।
আবার ভূগর্ভস্থ পারাপারের পথে সিটি করপোরেশনই নানা দোকান বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে। সেখানে দিনভর থাকে ক্রেতাদের ভিড়। ফলে ওই পথ দিয়ে যাতায়াতও একটি কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা। আবার যে পথ দিয়ে পাতালে ঢুকতে হয়, সেগুলো অনেকটাই নির্জন। একাধিক দিন সেই ফটকগুলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
মেয়র বলেন, ‘এখানে (বঙ্গবন্ধু চত্বর) যদিও বা আগে থেকেই পাতালে (মাটির নিচ দিয়ে) পথচারী চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু সেই পথচারী পারাপার বিভিন্নভাবে দখলের কারণে অকার্যকর হয়ে আছে। যার কারণে সাধারণ যাত্রী ও জনগণ নিচে নেমে পারাপার না করে রাস্তার উপর দিয়েই পারাপার করতে বাধ্য হয়।
‘এজন্য আমাদেরকে নতুনভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে। তাই পুরো বঙ্গবন্ধু চত্বর ও আশাপাশের অলি-গলি নিয়েই একটা সড়ক পরিকল্পনা করতে হবে, পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে কোনো উদ্যোগই এখানে কার্যকর হবে না। বঙ্গবন্ধু চত্বর ও পুরো এলাকা নিয়েই পথচারীবান্ধব সড়ক পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
গুলিস্তানে আগেও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু কোনোটাই ফলপ্রসূ হয়নি উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘এখানে কয়েকমুখী যাতায়াত ব্যবস্থা (লক্ষ্য করা য়ায়)। প্রত্যেকটি যাতায়াত ব্যবস্থাকে কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করব এবং আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই সেই কার্যক্রম আরম্ভ করব।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের নিহতের ঘটনায় দোষীদের বিচার চেয়ে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা নগর ভবনে জড়ো হয়ে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সাক্ষাৎ চেয়েছেন। ফাইল ছবি
ময়লাবাহী গাড়ির চালক সংকট কেন?
ময়লাবাহী গাড়ির চালক সংকট নিয়ে এক প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এই বিষয়টা আমার নজরে আসে যে, আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি চালক নেই। এরপর আমরা নিয়োগের উগ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমরা ৫০ জন ভারী গাড়ি চালকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। আমরা ৩২ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু বিআরটিএ থেকে যথাসময়ে লাইসেন্স প্রদান না করার কারণে আমরা মাত্র ১৯ জনকে নিয়োগ দিতে পেরেছি।
‘আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে (অর্গানোগ্রাম) ১৮৩টি পদ আছে। সেই হিসেবে আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি চালক নেই। কিন্তু যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেই গাড়িতে আমাদের নিয়মিত গাড়ি চালককেই দায়িত্ব দেয়া ছিল। কিন্তু সেই চালক দায়িত্বে অবহেলা করে, গাফিলতি করে আরেকজন ভাড়াটিয়া চালককে দিয়েই গাড়ি চালিয়েছে। সেটি জঘন্যতম অন্যায় হয়েছে।’
সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় তিন দিনের মাথায় দুজন নিহতের ঘটনায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িটি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার সড়কে চালকবিহীন অবস্থায় ছিল। ছবি: নিউজবাংলা
এর আগে মেয়র নগরীর ৫৬ নং ওয়ার্ডে অন্তবর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র এবং বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশ হিসেবে মতিঝিলে নির্মিত যাত্রী ছাউনি পরিদর্শন করেন।