বাঁশের তৈরি পলো নিয়ে কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ দলবেঁধে নেমে পড়ে নদীর হাঁটুপানিতে। তাদের পলোর নিচে ধরা পড়ে নানা জাতের দেশীয় মাছ। এ সময় এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। সে উৎসব দেখতে হাজির হয় নদীরপাড়ের অনেক মানুষ।
নওগাঁ জেলায় পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবের চিত্র এটি। সম্প্রতি বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ব্রিজের নিচে ছোট যমুনা নদীতে এ উৎসবের আয়োজন করে স্থানীয়রা। প্রতিবছরই শীতের শুরুতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
পলো দিয়ে মাছ ধরার উপযোগী সময় মনে করা হয় শীতকালকে। এ সময় খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যায়। বাঁশ ও জাল দিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য পলো তৈরি করা হয়েছে। আগে থেকেই এলাকায় ঘোষণা দেয়া হয়েছে মাছ ধরার।
এলাকার শৌখিন ও পেশাদার শিকারিরা মাছ ধরতে নেমে পড়ে পানিতে। বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই ঐতিহ্য। পলো দিয়ে মাছ ধরার এই উৎসবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এখানে মাছ ধরায় কেউ বাধা দেয় না। নির্ধারিত সময়ে সবাই একসঙ্গে নেমে পড়ে নদীতে।
মাছ ধরার উৎসবে অংশ নেয়া স্থানীয় কোলা গ্রামের তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘হামি পেশায় একজন কৃষক। প্রতিবছোরের শীতের এই সমোয়ত নদীর পানি কুমা যায়। তখন হামরা আশে-পাশের গ্রামের মানুষেরা একসাথে মিলা পলো দিয়া মাছ ধরি। আজক্যা এই মাছ ধরার উৎসোবত প্রায় দেড়শ থ্যাকা দুইশ জনের মতো মানুষ অংশ লিছে।’
বিলাশবাড়ী গ্রামের লিটন হোসেন এসেছেন মাছ ধরার উৎসবে। তিনি বলেন, ‘চার দিন আগে বালুভরা গ্রামের কয়েকজন মিলা মাইকিং করিছে যে আজক্যার নদীত থ্যাকা পলো দিয়া মাছ ধরা হবে। তাই আগে থাকাই বাঁশ ও জাল দিয়া পলো তৈরি করে রাখিছি। আজক্যা আসা একন পর্যন্ত তিনডা বোয়ালমাছ ধরিছি।’
বালুভরা গ্রামের শাহাদত হোসেন বলেন, ‘কোলা, ভাণ্ডারপুর, বিলাশবাড়ী, আক্কেলপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুইশজনের মতো অংশ নিয়েছে এ উৎসবে।
‘এ নদীতে বোয়াল, কই,শিং, পুঁটি, শোলসহ বেশ কয়েক জাতের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সবাই মিলে অংশ নিতে পেরে আমাদেরও অনেক ভালো লাগছে। বছরের একটি দিনেই আমরা এই নদীতে এমন আয়োজন করে থাকি।’
মাছ ধরার উৎসবকে কেন্দ্র করে নদীর আশপাশের বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসেছে উপভোগ করতে।
ভাণ্ডারপুর গ্রামের রিপন হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে শহরে যাচ্ছিলাম মোটরসাইকেলে করে। নদীতে একসঙ্গে এত মানুষ মাছ ধরছে দেখে নদীর কাছে না এসে আর থাকতে পারলাম না। তাই এসেছি মাছ ধরা দেখতে।’
‘অনেক ভালো লাগছে এমন আয়োজন দেখে। নদীমাতৃক এই দেশে এমন আয়োজন না হলে কেন জানি এক ধরনের অপূর্ণতা রয়ে যায়।’
বদলগাছী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, নওগাঁ জেলায় ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী ও খাল-বিল রয়েছে। শীতকালে নদীর পানি শুকানো শুরু হয়। এ কারণে নদীপারের আশপাশের গ্রামের মানুষ পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠে। এটি গ্রামবাংলার একটি প্রাচীন উৎসব।
নওগাঁ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী, পুণর্ভবা নদী, আত্রাই নদী, তুলশীগঙ্গা, শিব নদী, ফকিরনি নদী এবং নাগর নদী। বিল মুসছুর, গুটার বিল, দীঘলির বিল, জবই বিলসহ অসংখ্য ছোট বিলও আছে এখানে।