ঢাকার সাভারে একটি পোশাক কারখানায় করোনার টিকা নেয়ার পর কয়েকশ শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শ্রমিকদের তথ্য, টিকা নেয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ জন। তাদের মধ্যে রেশমা নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টিকা নেয়ার পর অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯ জন। রেশমার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার ইপিক গ্রুপের কসমোপলিটান ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড (সিআইপিএল) কারখানায় সোমবার টিকা নেয়ার পর শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর ছড়ায়।
ওই দিন অসুস্থ হওয়া শ্রমিকরা হলেন, শুকুর নাহার, মোছা. জান্নাতুল, নার্গিস আক্তার, কদ বানু, খাদিজা আক্তার, মা মনি, শিল্পী আরা ও আব্দুল মান্নান।
কারখানায় কাটিং বিভাগের শ্রমিক নার্গিস সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নেয়ার পর ফ্লোরে গিয়া মাথা ঘুইরা পড়ে গেছি। বমি হইছে, মুখ দিয়ে ছেবরি (ফ্যানা) ছুইটে গেছে।
‘ওনারা (গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ) তাড়াতাড়ি ধইরে আমারে মেডিক্যালে নিয়া আইসে চিকিৎসা কইরে ছুটি দিয়া বাসায় পাঠায় দিছে। পরে দুই দিন বাসায় ছিলাম। আইজ অফিস থাইকে আমাদের হাসপাতালে শিফট করছে।’
কতজন অসুস্থ হয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমিতো প্রথম অসুস্থ হইছি। এরপর আমিতো চলে আসছি। পরে কতজন অসুস্থ হইছে তা ঠিক দেখি নাই। আমাদের কাটিং সেকশনে ৪০০ এর বেশি শ্রমিক আছে। তাদের মধ্যেও অনেকেই অসুস্থ হইছে। অন্য সেকশনেও অনেকে অসুস্থ হইছে।’
অসুস্থ আরেক শ্রমিক শুকুর নাহার নামে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নেয়ার পর দুপুরে বাসায় খেতে গেছি। তখন শীত লাগছিল। রাত ৮টায় কাজ শেষে বাসায় ফিরে আবার অসুস্থ লাগছিল। পরে কারখানা থেকেই আমারে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনছি আয়রন বিভাগের রেশমা আপা মারা গেছেন। আমরা সবাই একসঙ্গে টিকা নিছিলামে।’
স্যুইং সেকশনের শ্রমিক আব্দুল মান্নান জানান, টিকা নেয়ার পর সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করার পর তিনি বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অসুস্থ আরেক শ্রমিক মামনি বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট হইছিল আর হাত-পা খিঁচাইছে৷ পরদিন ছুটি দিছিল। মঙ্গলবার আইসা লাঞ্চ পর্যন্ত কাজ করছি। তখন ভালোই ছিলাম। এরপর থাইকা আবার অসুস্থ হইয়া পড়ছি।’
একই ধরনের সমস্যায় অসুস্থ হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোজিনা বেগম নামে আরেক শ্রমিক।
নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার অফিসার মিন্টু দাস জানান, অসুস্থ অবস্থায় ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিককে কারখানা কর্তৃপক্ষ ভর্তি করেছে। তারা এখন সুস্থ আছেন।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, সিভিল সার্জনের তত্তাবধানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়ে শ্রমিকদের টিকা দিয়েছেন। টিকা নেয়ার পর বিশ্রাম নিয়ে শ্রমিকেরা আবার কাজ করে যে যার বাড়িতে সুস্থ ফিরেছেন।
আর রেশমা মেয়েটা রাত্রে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে তার ভাই তাকে কারখানায় নিয়ে যান। কর্তৃপক্ষ তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়। হাসপাতালেই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পরে মরদেহ তার স্বজনরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করেছেন।
তিনি আরও জানান, করোনার কারণে বা করোনার টিকা নেয়ায় রেশমা মারা গেছে এরকম কিছু না। টিকা নেয়ার পর অনেকের জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি এগুলো হয়েছে। গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ তাদের আটজনকে নারী ও শিশু হাসপাতালে এবং একজনকে ইস্ট ওয়েস্ট হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। এর বেশি কেউ অসুস্থ হয়নি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, অসুস্থদের তেমন কোনো সমস্যা নেই, সবাই স্বাভাবিক আছে।