ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী পরীমনির করা মারধর, হত্যার হুমকি এবং ধর্ষণচেষ্টার মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নারাজি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মামলাটি একতরফাভাবে তদন্ত করা হয়েছে।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯-এর বিচারক মোহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিনের আদালতে বুধবার মামলাটির অভিযোগ গ্রহণ শুনানিতে প্রতিবেদনে নারাজির আবেদন করেন পরীমনি। আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে পরে আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে আদালতে উপস্থিত হন পরীমনি। আদালতে উপস্থিত হন নাসির উদ্দিন ও অমি।
আদালত আসামিদের পূর্বশর্তে জামিনের আবেদনও গ্রহণ করেছে আদালত।
শুনানির শুরুতে আসামিপক্ষের আইনজীবী কাওছার হোসেন বলেন, ‘মামলাটি অভিযোগ গ্রহণের জন্য আছে। আসামিরা আদালতে হাজির হয়েছেন। তারা জামিনে আছেন। যেহেতু মামলাটি ট্রাইব্যুনালে এসেছে, তাই আবার তাদের পূর্বশর্তে জামিন প্রার্থনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘বাদীপক্ষ এ মামলায় নারাজি দাখিল করবেন বলে শুনতেছি। তবে আমরা নারাজির কপি পাইনি। আমাদের একটি কপি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। নারাজি দাখিল করলে আমরা এ বিষয়ে পরে আবার বলব।’
পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী আসামিদের জামিন বাতিলের আবেদন করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আসামিরা বাদী, সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তারা বাইরে থাকলে মামলার বিচারে বিঘ্ন ঘটবে। বাদী ও সাক্ষীরা ঠিকমতো আদালতে এসে সাক্ষী দিতে পারবেন না। এ জন্য তাদের জামিন বাতিলের আবেদন করছি।’
এই আইনজীবী আদালতকে জানান, মামলার বাদী একজন চলচ্চিত্র নায়িকা, তার অনেক রেসট্রিকশন আছে। তার ওপর অনেক অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। এখন আবার ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে, যাতে তিনি এই মামলাটি প্রমাণে ব্যর্থ হন।
নারাজির বিষয়ে পরীমনির আইনজীবী বলেন, ‘মামলার তদন্তে অনেক বিষয় মিসিং আছে। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই আমরা মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করছি। আদালত চাইলে আবেদনে উল্লেখিত ধারা যোগ করেও আমলে নিতে পারেন। এ ছাড়াও আসামিদের পূর্বশর্তে জামিন আবেদন বাতিল করে তাদের জেল হাজতে প্রেরণের প্রার্থনা করেছি।’
এরপর বিচারক নারাজির বিষয়ে পরীমনির জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘এ মামলার ভিডিও ফুটেজ নাই। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের চার্জশিটে রাখা হয়নি। দুজন ম্যাজিস্ট্রেটকেও সাক্ষী থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
‘যারা ভিডিওটি করেছেন এবং ঘটনার সময় যারা ছিলেন, তাদের সাক্ষী করা হয়নি। তারা কোথায়? মামলাটি একতরফাভাবে তদন্ত হয়েছে। এ জন্য মামলাটি পুনরায় তদন্তের প্রয়োজন।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শহিদ হোসেন ঢালী বলেন, ‘মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়নি। মামলাটি পুনরায় তদন্তের প্রয়োজন। পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন প্রার্থনা করছি।’
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত হয়েছে। এখন আবার পুনরায় তদন্তের প্রয়োজন নেই।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দুই আসামিকে পূর্বশর্তে জামিনের আদেশ দেন। আর নারাজির বিষয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়ে দেন।
‘আমার না, র্যাপিস্টদের ছবি তুলুন’
শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা পরীমনির ছবি তুলতে যান। তখন পরীমনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছবি না তুলে র্যাপিস্টদের ছবি তুলুন।’
পরীমনির গত ৬ সেপ্টেম্বরের মামলায় নাসির, অমি ও শহিদুল আলম নামের ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে অভিযোগ দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন।
গত ১৪ জুন সাভার থানায় হত্যার হুমকি এবং ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। মামলার পর অভিযানে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
ওই দিনই নাসির উদ্দিনসহ পাঁচজনকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। অভিযানে ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ-বিয়ার ও ইয়াবা জব্দ করা হয়।
এরপর দিবাগত রাতে ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার শিকদার বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন।