বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিতে চায়। শান্তি সম্মেলনের মাধ্যমে এই বার্তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার সকালে শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনক্লোজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও মানবিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’।
রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবারের সম্মেলন সশরীরে ও ভার্চুয়াল- দুই ধরনের অধিবেশনই থাকছে। সম্মেলনে ‘ঢাকা শান্তি ঘোষণা’ গৃহীত হবে।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নামে সম্মাননা দেয়া হবে। বৈশ্বিকভাবে যেসব মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছেন, বিশেষ করে কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, বিজ্ঞানীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মেলনে সম্মানিত করা হবে।
ঢাকায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ‘সিনেমা ফর পিস’ নামের দুই দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবের। জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আজ ও কাল এ উৎসব চলবে। চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। সেগুলো হলো- ব্যালাড অফ আ সোলজার, দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইয়িং, ওয়ার অ্যান্ড পিস ও অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী।
এসব চলচ্চিত্র দেখতে দর্শককে কোনো ফি দিতে হবে না।
বিশ্ব শান্তি নিয়ে কাজ করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিক, নোবেল বিজয়ী, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী, চলচ্চিত্রকার, থিংক ট্যাংক ও সাবেক রাজনীতিকরা সম্মেলনে অংশ নেবেন।
ধর্মীয় ইস্যুতে ভ্যাটিকান সিটি থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে, ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল থেকে কিছু ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথির জন্য চারটি প্যানেল ডিসকাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সম্মেলনের শুরুর দিন দুটি এবং সমাপনী দিনে দুটি প্যানেল ডিসকাশন হবে। এসব প্যানেল ডিসকাশনে যোগ দিয়ে অতিথিরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।
৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো অতিথি সশরীরে সম্মেলনে যোগ দেবেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন ৩৪ জনের মতো। এদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তং, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ভারতের কৈলাশ সত্যার্থীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রয়েছেন বলে জানানো হয়।
সশরীরে থাকবেন শ্রীলঙ্কান ইউনিভার্সিটি অফ কলম্বোর উপাচার্য অধ্যাপক চান্দ্রিকা এন ওয়াজেয়ারতে, ভারতের চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ, ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভুসহ আরও অনেকে।
সম্মেলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শান্তির সবচেয়ে বড় অগ্রদূত। উপমহাদেশসহ সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু আজীবন কাজ করে গেছেন এবং সে জন্যই তিনি আমাদের বৈদেশিক নীতি করেছেন- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন যে, পিস ইজ ইম্পারেটিভ ফর ডেভেলপমেন্ট। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে এই পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছেন। তিনিও সব সময় শান্তির অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীতে সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ কমানোর জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেটি হচ্ছে শান্তির সংস্কৃতি এবং এই প্রস্তাবটি পৃথিবীর সব দেশ গ্রহণ করেছে। এই যে শান্তির প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস, এটি আমরা বিশ্বে ছড়িতে দিতে চাই। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী যে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা দিয়েছেন, এটিও আমরা তুলে ধরব। সম্মেলন থেকে আমরা পৃথিবীতে শান্তির বার্তা দিতে চাই। আমরা চাই এই বার্তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ুক। পৃথিবীতে টেকসই শান্তির জন্য প্রয়োজন একে-অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, সহনশীলতা। এগুলো আমরা তুলে ধরব। এই সম্মেলন বিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহযোগিতা করবে। এ জন্যই আমাদের এ আয়োজন।’
‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’ উপলক্ষে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বিএইচএফ) সহায়তায় মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে একটি প্রীতি টি-১০ ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হবে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে। ১০ ওভারের এই ম্যাচে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররা ‘টিম হারমনি’ ও ‘টিম ইউনিটি’ নামে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণ করবেন।
আফ্রিকান দেশগুলো থেকে দেশে ফিরতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে সবাইকে। মন্ত্রী বলেন, ‘যারা আসে, তারা তো আমাদের নাগরিক। আমরা তো তাদের নিষেধ করতে পারি না। তবে জরুরি না হলে তাদের আসতে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। আর আসলে অবশ্যই তাদের আনুষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।’