বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উন্নয়নে কাটা পড়েছে হাজার গাছ

  •    
  • ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:০২

সিলেট শহরে নির্বিচারে চলছে বৃক্ষ নিধন। উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশের বেশির ভাগ গাছ। তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বন বিভাগের অনুমতির। স্যাটেলাইট ইমেজের ভিত্তিতে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২১ বছরে সিলেট নগরের সবুজ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

‘হে পথিক, আমাকে হত্যার প্রস্তুতি চলছে! অক্সিজেন দিয়ে ছায়া দিয়ে তোমাদের বাঁচাই। আমাকে বাঁচাও।’– সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার একটি বিশাল গাছের গায়ে লাগানো লাল কাপড়ে এটি লেখা।

পরিবেশবাদি সংগঠন ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেট’ ও ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর সদস্যরা গাছের গায়ে টাঙিয়েছেন এই লাল নিশান।

সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ড্রেন নির্মাণের অজুহাতে চৌহাট্টা এলাকার শতবর্ষী এই গাছটি কাটার উদোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। খবর পেয়ে তারা সেখানে জড়ো হয়ে গাছের গায়ে বাঁচার আকুতি-সংবলিত এই ব্যানার টাঙিয়ে দেন।

পরিবেশকর্মীদের এই উদ্যোগে রক্ষা পায় শতবর্ষী এই গাছটি। তবে সিলেট নগরের অনেক গাছকেই রক্ষা করা যায়নি।

সম্প্রতি নগরে নির্বিচারে চলছে বৃক্ষনিধন। উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হয়েছে সড়কের পাশের বেশির ভাগ গাছ। তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বন বিভাগের অনুমতির।

নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার সড়ক সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে সিটি করপোরেশন। এই সড়ক সম্প্রসারণের জন্য কিছু গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের কাছে আবেদন করে সিসিক। তবে বন বিভাগের জরিপের আগেই গত ২৫ নভেম্বর এক রাতে কেটে ফেলা হয় ওই এলাকার সড়কের পাশের ২০০টি গাছ। গাছ কেটে এক দিনের মধ্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

জরিপকাজ শেষ হওয়ার আগে গাছ কেটে ফেলা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকারের এক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠানের মন্তব্য করা শোভন নয়। আপনারাই খোঁজখবর নিয়ে দেখেন।’

পরিবেশকর্মীদের দাবি, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সড়ক সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের নামে সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই অপ্রয়োজনে কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এটিকে প্রাণবিধ্বংসী উন্নয়ন বলে আখ্যায়িত করছেন তারা।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, এই সময়ে জরুরি প্রয়োজনে পাঁচ শর মতো গাছ কাটা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ বলেন, ‘কেবল সড়ক আর ফুটপাত করলেই উন্নয়ন হয় না। এই নগরে প্রতিদিন কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তার মাত্রা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। কারণ আগামীতে টাকা থাকলেই বেঁচে থাকা যাবে না। যত বেশি সবুজ থাকবে, তত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। এ জন্য নগরের গাছগুলো রক্ষা করতে হবে। আরও বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট নগরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে নগরের প্রায় প্রতিটি সড়ক, নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে ড্রেন। গত অর্থবছরেই সিলেটের উন্নয়নে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নেও চলছে বড় কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ।

তবে এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বলি হচ্ছে গাছ। উপশহরের আগে নগরের শাহী ঈদগাহ, চৌহাট্টা, কাজী জালাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক সম্প্রসারণে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হয়।

বিভিন্ন সড়ক সম্প্রসারণ করতে গিয়ে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়। ছবি:নিউজবাংলা

পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সদস্য দ্বোহা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জরিপ করে দেখেছি, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নগরে হাজারের বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। উন্নয়নের কথা বলে এসব গাছ কাটা হলেও এর অনেকগুলোই কাটা হয়েছে অপ্রয়োজনে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে।’

গুগলের স্যাটেলাইট ইমেজের ওপর ভিত্তি করে জিআইএস এবং রিমোট সেন্সিং ভিত্তিক হাইব্রিড ইমেজ ক্লাসিফিকেশন টেকনিকের মাধ্যমে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২১ বছরে সিলেট নগরের সবুজ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন জিআইএস ও আরএস বিশ্লেষক সঞ্জয় রায়।

সবুজ কমে যাওয়ার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্বিচারে গাছপালা কাটা, পাহাড়-টিলা কাটা ও জনসংখ্য বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন সঞ্জয় রায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৩০ বছরে সিলেট নগরী সবুজহীন হয়ে পড়বে বলে শঙ্কা তার।

নগরের গাছ কাটার ক্ষেত্রে কারো কোনো মতামত নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম। তিনি বলেন, ‘নগরের পরিবেশ রক্ষায় সিটি করপোরেশনের একটি কমিটি আছে। আমিও সেই কমিটির সদস্য। তবে গাছ কাটার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো মতামতই নেওয়া হয় না, বরং আমাদের আপত্তি উপেক্ষা করেই গাছ কেটে ফেলা হয়।’

কীম বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়, একটি গাছ কেটে অনেক গাছ রোপণ করা হচ্ছে। কিন্তু এমন দাবিতে একটি বড় ধরনের ফাঁকি রয়েছে। সিটি করপোরেশন বড় বড় গাছগুলো কেটে সৌন্দর্যবর্ধনমূলক ফুলের গাছ লাগাচ্ছে। এতে সৌন্দর্য বাড়লেও পরিবেশের কোনো লাভ হচ্ছে না।’

গাছ কাটার বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নগরের পরিবেশের সুরক্ষায় আমরা সব সময়ই আন্তরিক। টিলা ও গাছ কাটা এবং জলাশয় ভরাট না করেই আমরা উন্নয়নকাজ করছি। তবে বাধ্য হয়ে কিছু গাছ কাটতে হয়েছে। যদিও কাটার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গাছ আমরা গত তিন বছরে রোপণ করেছি। সিলেটকে একটি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর