আলোচিত রেইনট্রি মামলায় ভুক্তভোগীরা যে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং চার আসামি মহানগর হাকিমের কাছে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে মিল রয়েছে। ভুক্তভোগীরা ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। আসামিরা জবানবন্দিতে তা স্বীকার করেছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তার রায় দেয়ার ক্ষেত্রে এ জবানবন্দিগুলোকে খুব বেশি আমলে নেননি বলেই আইনজীবীদের মনে হয়েছে। তারা এটিকে অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করে বলেছেন, অভিযোগকারীর জবানবন্দি ও আসামির জবানবন্দি মিলে গেলে মামলার অভিযোগ পোক্ত হয় বলেই সাধারণত ফৌজদারি মামলায় মনে করা হয়।
রায় ঘোষণা করার সময় ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার আলোচিত এই মামলার বাদী কর্তৃক করা এজাহার, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী, অভিযোগপত্র, অভিযোগ গঠন, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, দুই পক্ষের আইনজীবীদের জেরার অংশ, মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ খুঁটিনাটি সব বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন।
এ সময় আদালতের এজলাস কক্ষের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী, আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রস্তুত না হওয়ায় মামলাটির চার শতাধিক পৃষ্ঠার নথিপত্রের অংশবিশেষ আড়াই ঘণ্টা যাবৎ পড়ে শোনান বিচারক কামরুন্নাহার।
এ দিন তিনি আদালতে মৌখিক কিছু কথা উপস্থাপন করেন, যা ওই মামলার রায়, পর্যবেক্ষণ বা নথিপত্রের কোথাও লেখা ছিল না।
আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করা নিয়ে বিচারক তার মতামত দিয়ে বলেন, ‘সরকারের মূল্যবান সময় ও অর্থ অপচয় করার অধিকার কারো নেই। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
তিনি বলেন, ‘মামলার ঘটনায় ভুক্তভোগীকে (ভিকটিম) বারবার ওয়ারেন্ট পাঠিয়েও আদালতে হাজির করা যায়নি। এটা খুবই দুঃখজনক! এই আদালতে আজকেসহ ৯৪টি কার্যদিবস নষ্ট করা হয়েছে। অনেকে মামলা করেন ঠিকই, কিন্তু বিচার শুরু হলে পরে তাদের কোনো খবর থাকে না। এমনকি অনেক সময় মামলার বাদী পর্যন্ত আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেন না।’
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ভুক্তভোগীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন।
ঘটনাটি ২০১৭ সালের ২৮ মার্চের হলেও ১ নম্বর ভুক্তভোগী রাজধানীর বনানী থানায় এজাহার করেন ঘটনার ৩৮ দিন পর ৬ মে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি ওই বছরের ১১ মে মামলার বাদী ও তার সমবয়সী বান্ধবীকে ঢাকার মুখ্যমহানগর হাকিম আদালতের হাকিমের কাছে হাজির করে ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর ১৮ দিন পর ২৯ মে, ২০১৭ তাদের বন্ধু আহমেদ শাহরিয়ার মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো. খুরশীদ আলমের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এসব জবানবন্দিতে তারা তিনজনই স্বীকার করেন, আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার সাফাত আহমেদ ১ নম্বর ভুক্তভোগী মামলার বাদীকে এবং সাফাত আহমেদের বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এ ই এম হালিম ১ নম্বর ভুক্তভোগীর বান্ধবীকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের আগে তাদের প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করানো হয়। বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ছাদের সুইমিংপুলে সুইমিং করা, দফায় দফায় মদ্যপান করা, ব্লু টুথ চালু করে সাউন্ড বক্সে সংযোগ দিয়ে ‘ডান্স’ করার পর ধর্ষণের কথা ভুক্তভোগীরা তাদের ২২ ধারার জবানবন্দিতে বর্ণনা করেন।
১ নম্বর ভুক্তভোগী তার জবানবন্দিতে বলেন, তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি সাদমান সাকিফের সঙ্গে পরিচিত দুই বছর আগে থেকে। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে। সেই সুবাদে কয়েকবার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল। এই মামলার ঘটনার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে পিকাসো রেস্টুরেন্টে তাদের যেতে বলেন সাদমান সাকিফ।
সাদমান তার এক ‘ঘনিষ্ঠ বড় ভাই’ আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার কথা বলেন। এরপর বান্ধবীকে নিয়ে ১ নম্বর ভুক্তভোগী পিকাসো রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে সাফাতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানে সাফাত বসে মদ্যপান করছিলেন। এ সময় সাফাত তার ব্যক্তিগত অনেক কথা ‘শেয়ার করেন’। সেখানে তিনি দুজনের মোবাইল নম্বর নেন।
এর পর ২৮ মার্চ, ২০১৭ সালে সাফাত তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ভুক্তভোগীকে দাওয়াত দেন। এর আগে প্রায় প্রতিদিনই সাফাতের সঙ্গে তার ফোনে কথা হতো। অনেক কথা হওয়ার মধ্য দিয়ে সাফাতের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যান ভুক্তভোগী। এরপর কয়েক দফা তাদের দেখাও হয় হোটেল পিকাসোতে। ভুক্তভোগী তার জবানবন্দিতে বলেন, তার একটি ‘ফ্রেন্ডলি রিলেশন’ ছিল সাফাতের সঙ্গে।
২৮ মার্চ সাফাত তার জন্মদিনে যাওয়ার জন্য ভুক্তভোগীকে বারবার বলেন। ভুক্তভোগীর বান্ধবী অসুস্থ ছিলেন, তাই তারা কেউ যেতে চাচ্ছিলেন না, কিন্তু সাফাত অনেক অনুরোধ করেন যাওয়ার জন্য এবং গাড়ি পাঠিয়ে দেন। তার ড্রাইভার বিল্লাল আর গানম্যান রহমত আলী এসে দুই বান্ধবীকে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান।
রাত তখন ৯টা বাজে। তারা রুফটপে যান। সেখানে সাফাত ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাঈম আশ্রাফ এবং দুটি মেয়ে নাজিয়া, তানজিলা আলিশা ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগীর বন্ধু শাহরিয়ার ও স্নেহা আসে। তারা আর কোনো অতিথি দেখেননি।
সুইমিং করার কথা জেনে ভুক্তভোগী বাড়তি পোশাক নিয়ে গিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগী তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘ড্রেস পরিবর্তন করতে গিয়ে আমি ড্রিংকসের বোতল (মদ), সিগারেট ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই দেখি। আমি সুইমিং করি শুনে সুইমিংয়ে যাওয়ার আগে সাকিফ আসে। এদিন ও সরাসরি ইন্ডিয়া থেকে ওখানে আসে। সাফাত ও সাকিফ সুইমিং করে। আমরা চলে যেতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু মাহির হারুন নামের এক লোক আসে, সে নাকি রেইনট্রি হোটেলের মালিকের ছেলে। আমাদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে চলে যায়। এরপর শাহরিয়ার নিচে ফ্রেশ হতে গিয়ে ভুল করে ওয়াশরুমে গাড়ির চাবি রেখে আসে। গাড়ির চাবি আমরা সবাই খোঁজাখুঁজি করেও পাই না।
‘সাকিফ সব দেখছিল। এরপর নাইম একসময় গাড়ির চাবি বের করে দেয়। বিষয়টি আমাদের একটু সন্দেহ হলে আমরা চলে যেতে চাই। এ সময় শাহরিয়ারের সঙ্গে কথা আছে বলে সাফাত তাকে নিচে ডেকে নিয়ে যায়। আবার শাহরিয়ার এসে আমাদের নিচে নিয়ে যেতে চাইলে ওরা শাহরিয়ারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে যায়। আমাকে ও আমার বান্ধবীকে সাফাত ফ্যামিলি স্যুটে নিয়ে যায়। নাইম ও সাকিফ আগে থেকে ওই রুমে ছিল। সাফাত, সাকিফ আর আমি লিভিং রুমে থাকি। আমার বান্ধবী আর নাঈম ফ্যামিলি স্যুটে ছিল। সাফাত শটগান দিয়ে আমাকে জোর করে ড্রিংক করায়, সাকিফ এ সময় চুপ করে ছিল। আমার অনেক সময় সেন্স ছিল না।
ওই ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘সেন্স ফেরার পর আমি খেয়াল করি যে, আমি সোফায় পড়ে আছি। শরীরটা ভারি ভারি। সাকিফ বসে মোবাইল টিপাটিপি করছে, সাফাত প্যান্টের চেইন লাগাচ্ছে। এ সময় দেখি, আমার বান্ধবী আমার সঙ্গে নেই। চিৎকার শুনে ফ্যামিলি স্যুটে ঢুকে দেখি, নাইম আমার বান্ধবীর সঙ্গে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছে।
‘সে কাঁদছিল। সাকিফ চলে যায়। আমাদের ছেড়ে দিতে বলি। নাঈম, সাফাত এ সময় তুই-তুকারি করে কথা বলে ও আমাকে থাপ্পড় দেয়। এরপর শাহরিয়ারকে আমাদের রুমে নিয়ে আসে, তাকে খুব মারধর করে এবং তাকে দিয়ে বলায় যে, সে ইয়াবার ডিলার। সাফাত তার ড্রাইভার বিল্লালকে দিয়ে শাহরিয়ারের কথা তিনবার করে ভিডিও করায়। সেই ভিডিও দেখিয়ে তারা অনেক কথা বলতে থাকে। এরপর শাহরিয়ারকে আবার পাশের রুমে পাঠিয়ে দেয়।’
ওই তরুণী আরও বলেন, ‘আমাকে সাফাত এক রুমে নেয়, নাইম আমার বান্ধবীকে নিয়ে ফ্যামিলি স্যুটে থাকে। সাফাত আমাকে লিভিং রুমে নিয়ে রেপ (ধর্ষণ) করে। এরপর নাঈমের রুমে গিয়ে তাকে সাহায্য করে আমার বান্ধবীকে রেপ করার জন্য। এ সময় বিল্লাল বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে নাঈম আমার বান্ধবীকে রেপ করার দৃশ্য ভিডিও করে। আমি নিজে বিল্লালকে ভিডিও করতে দেখেছি।
‘একসময় সকাল হয়ে আসে। আর আমরা কাঁদতে থাকি। এরপর সাফাত আমাকে শাসিয়ে বলে যে, ওর কিছু হবে না, এসব কথা যেন কাউকে কিছু না বলি। এরপর সকাল বেলা সাফাত শাহরিয়ারের গাড়ির চাবি আমার কাছে দিলে আমি শাহরিয়ারকে ফেরত দিয়ে চলে যেতে বলি। সে তখন তার বান্ধবী স্নেহাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর সাফাতরা উবার ডাকে। আমি, আমার বান্ধবী, সাফাত ও নাঈম সেই উবারে উঠি।’
জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘সাফাতরা বাসায় নেমে যায়। আমরা সেই গাড়ি নিয়ে চলে যাই। এরপর সাফাত অনেকবার ফোন দিয়েছে, কিন্তু আমি ধরিনি। এরপর সাকিফ আমাকে (মেসেজ দিয়ে) নক করে, তাকে বলি তোমরা যেন সামনেই না আসো। তুমি আমাদের রেখে চলে গেলে কেন? সাকিফ তখন বলে, এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আরো খারাপ কিছু হতে পারে।
‘এরপর সাফাত এক দিন ফোন দিয়ে আমাকে গালিগালাজ করে। এরপর পাপ্পু আর সৌরভ নামে দুই বড় ভাইকে সব বলার পর সাফাত ও নাঈমকে ওরা হোটেল পিকাসোতে ডাকে। আমি, আমার বান্ধবী, সাকিফ, সাফাত, নাঈম, পাপ্পু, সৌরভ আর নাদিম ৩১ মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যায় মিট করি। তখন সাফাত ও নাঈম বলে, ওরা সেদিন ইয়াবা আর মদ খাওয়া ছিল, তাই হুঁশ ছিল না। ওরা ফাজলামি করে ‘স্যরি’ বলে এবং বলে যে ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছি। কিন্তু আবার আমাদের ‘ফ্রড’, ‘বাজে মেয়ে’ বলে, বলে ভিডিও আছে। তখন আমাদের চলে যেতে বলে। এরপর আমরা আর চুপ না থেকে মামলা করি।’
এভাবেই ১ নম্বর ভুক্তভোগী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ২২ ধারার জবানবন্দি দেন, যেটি সাড়ে ছয় পৃষ্ঠার। ২ নম্বর ভুক্তভোগী ৮ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দেন।
৩ নম্বর ভুক্তভোগী আহমেদ শাহরিয়ার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. খুরশীদ আলমের কাছে ২২ ধারায় দুই পৃষ্ঠার জবানবন্দি দেন।
এ ছাড়া পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিমের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আহসান হাবিব ১৮ মে, ২০১৭ তার খাস কামরায় আসামি সাফাত আহমেদের জবানবন্দি গ্রহণ ও রেকর্ড করেন, যা হাতে লেখা এবং ১০ পৃষ্ঠার।
একই তারিখে মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী তার খাস কামরায় সাদমান সাকিফের জবানবন্দি গ্রহণ ও রেকর্ড করেন, যা হাতে লেখা সাড়ে ছয় পৃষ্ঠা।
মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার ২৫ মে (২০১৭) তারিখে তার খাস কামরায় হাতে লেখা সাড়ে ছয় পৃষ্ঠার নাঈম আশ্রাফের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
মহানগর হাকিম মো. মাহমুদুল হাসান ২১ মে, ২০১৭ সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন, যেটি কম্পিউটার টাইপকৃত সাড়ে চার পৃষ্ঠার।
জবানবন্দিতে নাইম আশরাফ বলেন যে, সাফাতসহ তারা বিভিন্ন উঠতি মডেল ও তাদের বান্ধবীদের টাকার বিনিময়ে ‘শারীরিক মেলামেশা’ করতেন।
সাফাত ও নাঈম তাদের জবানবন্দিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২৩ বছর বয়সী ওই দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া সাদমান সাকিফ ও গাড়িচালক বিল্লাল ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
নথিপত্রের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ভুক্তভোগীসহ তিনজন ধর্ষণের যে অভিযোগ করেছেন চার আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তা অকপটে স্বীকার করেছেন। এ সাতজনের সাক্ষ্য আদালতের কাছে কেন গ্রহণযোগ্যতা পেল না, তা নিয়ে আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজমা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দেয়া ভুক্তভোগীর ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দি মিলে যায় এবং যদি কোনো নরমাল সাক্ষীও আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়, তাহলে কেন সাজা দেয়া হবে না? এসব ক্ষেত্রে শাস্তি না দেয়ার কারণই বা কী থাকতে পারে?’
তিনি বলেন, দুই ছাত্রীর ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দির সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দির যেহেতু মিল রয়েছে, ফলে আসামিদের খালাস পাওয়াটাই একটি নজির হয়ে গেল।
সুপ্রিম কোর্টের অন্য আইনজীবী পারভেজ হাসেম বলেন, ২২ ধারা ও ১৬৪ ধারা মিলে গেলে এবং দু-একটি সাক্ষী আসামিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার পরও যদি কোনো সন্দেহের সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে আসামিরাই আইনগতভাবে লাভবান হয়। তবে সবই বিচারকের নিজস্ব এখতিয়ারের বিষয়। তিনি চাইলে সাজা দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন।
ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী জীবন জয়ন্ত বলেন, দুই ধরনের জবানবন্দি মিলে যাওয়ার পর যদি একটি সাক্ষ্যও আসামির বিপক্ষে সত্য বলে মানা হয়, তাহলে তাকে সাজা দিতে বিচারকের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, একটি সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে দণ্ডিত করার বহু নজির ও উচ্চ আদালতের দেয়া সিদ্ধান্ত রয়েছে।