কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির আলোচনার পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এবার সরকারপ্রধানের কাছে যাচ্ছেন।
বুধবার এই বৈঠক হবে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির প্রধান। তবে কী নিয়ে আলোচনা হবে, সে বিষয়ে তিনি আগাম কিছু বলতে চাইছেন না। বলেছেন, ‘বুধবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক আছে। তবে বৈঠকের আগে কিছু বলতে পারব না। আলোচনা শেষ করে এসে বলব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যানের এই বৈঠকের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পুঁজিবাজারের নানা বিষয়ে মতভিন্নতা নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্যে আসার কথা জানিয়েছেন বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনার পদ্ধতি ক্রয়মূল্যে নাকি বাজারমূল্যে হবে- এ নিয়ে বিতর্ক গত এক দশক ধরেই চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী এটি বাজারমূল্যে নির্ধারণ হয়। কিন্তু বিএসইসি চায় ক্রয়মূল্যে।
আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ এটা হবে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ।
শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। আর এখানেই বিপত্তি। ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যেই শেয়ার কিনলেও তার দাম বেড়ে গেলে বাজারমূল্যের ভিত্তিকে বিনিয়োগ গণনার কারণে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে আগেভাগেই। এতে পুঁজিবাজারে বিক্রয় চাপ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বাজারে হচ্ছে দরপতন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পুঁজিবাজারে উত্থানে সূচক বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা হাতের হারিয়ে ফেলা টাকা ফিরে পেতে শুরু করেন।
তবে এক দশক পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে মূলত ব্যাংকের শেয়ারের বিক্রয় চাপে সূচকের নিম্নগতি দেখা দেয়।
এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোকে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য করেছে। এর ফলে দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতেই পারছে না পুঁজিবাজার। শেয়ার দর কমে আসায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বন্ডে বিনিয়োগও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিনিয়োগসীমার মধ্যে ধরছে। অথচ বিএসইসি এই বিনিয়োগকে ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার পক্ষে। তারা বলছে, সারা বিশ্বেই এই বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাইরে থাকে।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনার পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি
সরকার পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলতে অনুমতি দিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডকে। আকর্ষণীয় মুনাফার এই বন্ডে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে। আর বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যায় বলে ব্যাংকগুলো হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। যারা করেনি, তাদের জরিমানার শিকার হতে হয়েছে।
এদিক টানা পতনের মুখে অস্থির পুঁজিবাজার নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি। বৈঠকে বহুল আলোচিত এক্সপোজার লিমিট বা ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ক্রয়মূল্যে বিবেচনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিট নিয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা এটা রিভিউ করব। গ্লোবালি এক্সপোজার লিমিট কস্ট প্রাইজের ভিত্তিতে করা হয়। এটি টেকনিক্যাল বিষয়, আরও গভীরভাবে আলোচনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্ট করা হবে। দাপ্তরিক কিছু কাজ শেষে চূড়ান্ত করে তা জানানো হবে।’
দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিএসইসির চেয়ারম্যানের এই বৈঠকের সময় নির্ধারণের খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।
পুঁজিবাজারে বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছে, সেটি এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক। আর বিএসইসি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক। মনে হচ্ছে, দুটির সংস্থার মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয়ের অভাব আছে।
‘পুঁজিবাজারে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ সুরক্ষা দেয়ার জন্য এক্সপোজার লিমিট নিয়ে বিএসইসিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। বিএসইসির একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু পুঁজিবাজার চাঙা করতে হলে বিনিয়োগ সুরক্ষা দিতে হবে, বিএসইসিকেও বাজারবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার দেয়া খুবই জরুরি।’