২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষায় প্রকৌশল এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগে প্রথম হয়েছেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের ছাত্র মেফতাউল আলম সিয়াম।
এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা এবং গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির (আইইউটি) ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম হন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সিয়ামের অবস্থান ছিল ৫৯তম। এ ছাড়া তিন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হন তিনি।
ধারাবাহিক এ সাফল্যের কারণ, অনুপ্রেরণাসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে সিয়ামের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
নিউজবাংলা: আইইউটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিট, বুয়েটের একটি বিভাগে আপনি প্রথম হয়েছেন। এ সাফল্যের মূল কারণ কী বলে মনে করেন?
সিয়াম: এইচএসসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পড়ালেখায় রেগুলার ছিলাম। বেশ কিছু রাইটারের বই ফলো করেছি। এইচএসসি থেকেই বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সলভ করার প্র্যাকটিস ছিল, যার কারণে ভর্তি পরীক্ষার পূর্ব সময়ে প্রস্তুতি নিতে অসুবিধা হয়নি।
আগে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে ধারণা ছিল। আমি এইচএসসি ফার্স্ট ইয়ার থেকেই নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। নিয়মিত পরিশ্রম করাটা এ ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে।
নিউজবাংলা: আপনার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা কার?
সিয়াম: অবশ্যই মায়ের ভূমিকা বেশি। ছোটবেলা থেকে অনুপ্রেরণা জোগাত। সে-ই পাশে ছিল। বাবার ভূমিকাও কম নয়।
আব্বু অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মকর্তা। আম্মু গ্র্যাজুয়েশন করা। আম্মু প্রাইমারি পর্যন্ত আমাকে গাইড করেছেন। পরবর্তী সময়ে আমি নিজেই নিজেকে সামলে নিয়েছি।
নিউজবাংলা: কোনো পরীক্ষা দেয়ার আগে প্রথম হওয়ার লক্ষ্য ছিল কী?
সিয়াম: পরীক্ষার হলে ও রকম টার্গেট ছিল না। নিজের বেস্ট আউটপুটটা দেয়ার চেষ্টা করছি। হয়তো আশা ছিল ভালো কিছু করব। আমি ফার্স্ট হব, সে রকম কোনো টার্গেট ছিল না।
নিউজবাংলা: আপনার সামনে অনেকগুলো অপশন। কোথায় ভর্তি হবেন?
সিয়াম: বুয়েটের ইইইতে (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ)।
নিউজবাংলা: কেন?
সিয়াম: আমি একজন রিসার্চার হতে চাই। ইইইতে রিসার্চের ফিল্ডটা বেশি।
নিউজবাংলা: এসএসসি থেকেই কি এমন স্বপ্ন ছিল?
সিয়াম: এসএসসি পর্যন্ত আমার লক্ষ্য ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আমার আম্মুও চেয়েছিলেন আমি চিকিৎসক হই, কিন্তু এইচএসসিতে এসে লক্ষ্য পাল্টে যায় একজন স্যারের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। আমি একজন সফল গবেষক হয়ে দেশ ও জাতির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে চাই।
নিউজবাংলা: আপনার সাফল্যে বন্ধু-বান্ধব কিংবা বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া কী?
সিয়াম: কলেজের শিক্ষকগণ অনেক খুশি। বন্ধুরা অনেক খুশি; তাদের ফ্রেন্ড ফার্স্ট হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
নিউজবাংলা: অনেকে বলে থাকেন তুখোড় মেধাবীরাও একসময় অতীতের সাফল্য ভুলে স্রোতে গা ভাসান। আপনি এ ব্যাপারে কতটা সতর্ক?
সিয়াম: আমরা যখন এসএসসি বা এইচএসসি লেভেলে পড়ি, তখন মা-বাবার গাইডলাইনে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সে গাইডলাইন থাকে না। ফলে আমাদের ম্যাচিউরিটির অভাবে বা নতুন জীবনযাপনের সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এমনটা হয়ে থাকে। অনেকে খাপ-খাইয়ে নিতে পারে না।
আমি মনে করি এ জায়গাগুলো বুঝে চললে কোনো সমস্যা হবে না।
নিউজবাংলা: আপনার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?
সিয়াম: একজন গবেষক হয়ে কাজ করা। ভালো কিছু করা, যা দেশের জন্য গর্বের হয়।
নিউজবাংলা: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
সিয়াম: পড়াশোনায় সবসময় রেগুলার থাকতে হবে। রেগুলার পড়ব। বুঝে পড়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি বিনোদনও থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় না হয়, সেটা খেয়াল রাখব। পড়াশোনায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সেটা সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।
নিউজবাংলা: আমাদের সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সিয়াম: আপনাকেও ধন্যবাদ।