দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগের দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনের পাশাপাশি মঙ্গলবার বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে চলছে প্রস্তুতি, জেলা থেকে নেতাকর্মীরা নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে জড়ো হতে শুরু করে দিয়েছেন সোমবার রাত থেকেই।
চট্টগ্রাম নগরীতে মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির সমাবেশ হবে বাকলিয়ায় এলাকায়। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের শামীম জানান, সমাবেশ থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনসহ সব জেলার নেতাকর্মীরা।
রংপুর নগরীতে মঙ্গলবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করেছে জেলা ও নগর বিএনপি।
এক বৈঠকে সোমবার সন্ধায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন জানান, সমাবেশে বিভাগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা পাবলিক লাইব্রেরিতে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, কিন্তু অনুমতি মেলেনি। তাই দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। আশা করছি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আমাদের নেত্রী, দেশনেত্রীকে চিকিৎসার সুযোগ, তার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নেতাকর্মীদের নাম করা মিথ্যা মামলা ও হয়রানি বন্ধ করবে।’
সিলেটে দলটির বিভাগীয় সমাবেশ হবে মঙ্গলবার দুপুর ২টায়, নগরীর রেজিস্টারি মাঠে।
জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশকে সফল করতে কয়েকদিন ধরেই সিলেটে প্রচার চালাচ্ছেন নেতারা।
সমাবেশ উপলক্ষ্যে সোমবার সন্ধ্যায় মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘পুলিশ আমাদের সব কর্মসূচিতে বাধা দেয়। আশা করছি এই মানবিক কর্মসূচিতে বাধা দেবে না। পুলিশের বাধা না পেলে কাল মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত করা হবে।’
ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্ণচূড়া চত্বরে দুপুরে সমাবেশের আয়োজন করেছে জেলা বিএনপি।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু জানান, সমাবেশে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
রাজশাহীতে সমাবেশের স্থল সোমবার সন্ধ্যা অব্দি ঠিক করা যায়নি বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে বড় সমাবেশ করার চেষ্টা করছি। শহরের বাটার মোড়ে করার চেষ্টা আছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও অনুমতি দেয়া হয়নি। বাটার মোড়ে অনুমতি না পেলে আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভূবন মোহন পার্কে সমাবেশ করবো।’
মিনু আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আসলে কারাগারে থাকাকালেই বেগম জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে এবং তার প্রভাবেই আজ নেত্রীর এই অবস্থা। তাকে বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না একারণেই। কারণ বিদেশী চিকিৎসকরা বের করে ফেলবে কেন তার এই সমস্যা হলো।’
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অসুস্থ থাকায় বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ পিছিয়ে ৩ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ এ তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়েছে। তবে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ হয়নি। আমরা দুইটি জায়গার জন্য পারমিশন চেয়েছিলাম। জিলা স্কুল ও ঈদগাহ খেলার মাঠ। সম্ভবত জিলা স্কুলেই আমরা সমাবেশ করবো। এটা আগামীকাল সিউর হওয়া যাবে।’
সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে সভা হয়েছে। সেখানে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তসলিম বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে মহাসমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসবেন। এর জন্য যে প্রস্তুতি নেয়া দরকার সেটা অলরেডি হয়ে গেছে।’
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেয়ার দাবিতে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি।
দণ্ড স্থগিত করে ২০২০ সালে বিএনপি নেত্রীকে কারাগারের বাইরে আসার সুযোগ করে দেয়া হয় দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সে আদেশে শর্ত হিসেবে দেশের বাইরে না যাওয়ার কথা বলা ছিল।
তবে গত এপ্রিলে করোনা নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলে পরিবারের পক্ষ থেকে একদফা এবং সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরেক দফা আবেদন করা হয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা একবার প্রয়োগ করার পর দ্বিতীয়বার প্রয়োগের সুযোগ নেই।
বিএনপি অবশ্য এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নয়। তাদের নেত্রীর লিভার সিরোসিস হয়েছে- এই বিষয়টি জানিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো দেশেই এর চিকিৎসা আছে। বিদেশে পাঠাতে দেরি হলে বিএনপি নেত্রীকে বাঁচানো যাবে না- এমন শঙ্কার কথাও বলছেন নেতারা।
এদিকে, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বেগম জিয়ার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
খালেদার চিকিৎসায় বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিএমএ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিতৎসকরাই এই রোগের বিশ্ব মানের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম।’
আরও বলা হয়েছে, লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আধুনিক পদ্ধতিতে দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম, তা করোনাকালে প্রমাণিত হয়েছে।