বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্বাচনের দুই দিনে ১০ প্রাণহানি

  •    
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ২০:২৫

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোট চলাকালে প্রাণহানির কোনো ঘটনা না ঘটলেও ভোট শেষে বিভিন্ন জেলা থেকে সহিংসতার খবর আসতে থাকে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাত জেলায় ১০ জন নিহতের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে আছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া দুজন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোটের পরে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে। জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর সনগাঁও ইউনিয়নের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সনগাঁও ইউনিয়নের গিডক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফল ঘোষণা নিয়ে হট্টগোলের পর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। তাদের হটিয়ে দিতে গেলে বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালালে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।

ওসি জানান, গুলিবিদ্ধদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর চিকিৎসক শাহপলি নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে পাঁচজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় পাই। বাকি চারজনকে সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।’

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাদিরুল আজিজ চয়ন বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে চারজনকে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। সারা রাত সেই দুজনকে আইসিইউতে রাখি এবং সকালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করি। রাস্তায় সেই দুজন মারা যান।’

ওসি জাহাঙ্গীর জানান, সোমবার মারা যাওয়া দুজন হলেন ৪০ বছরের মো. মাজহারুল ও ১৭ বছরের আদিত্য রায়। তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

যেভাবে সংঘর্ষ শুরু

ওসি জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোট শেষ হওয়ার পর ফল ঘোষণা করতে দেরি করছিলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুজ্জামানের সমর্থকদের বিতর্ক হয়। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নৌকার প্রার্থী শহীদ হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

‘ফল ঘোষণার পর নাখোশ কিছু এলাকাবাসী ভোটকেন্দ্র অবরুদ্ধ করে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সেখান থেকে পালাতে পারলেও একটি রুমে অবরুদ্ধ করা হয় তিন পুলিশ ও ১৫-১৬ জন আনসার সদস্যকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও দুই প্লাটুন বিজিবি সেখানে যায়। এলাকাবাসী তাদের ওপর হামলা চালান। বিজিবি পরে গুলি চালালে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।’

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ভোটের পর সহিংসতায় ঘটনাস্থলে নিহত হন এই ব্যক্তি

তিনি আরও জানান, গুলিবিদ্ধ দুজন রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় সোমবার সিরাজগঞ্জ ও কক্সবাজারে দুজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ভোট দেখতে গিয়ে মারধরে প্রাণ হারায় স্কুলছাত্র দেলোয়ার হোসেন সাগর। সে মাছুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে ও সলঙ্গা ইসলামি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ত।

হাটিকুমরুল ইউপির চেয়ারম্যান হেতায়েতুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, রোববার দুপুরে ভোট চলাকালে মাছুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী সেলিম রেজা মোল্লা ও হিরা সরদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

ভোট দেখতে গিয়ে সেখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পড়ে আহত হয় সাগর। তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোররাতে ছেলেটি মারা যায়।

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত স্কুলছাত্র দেলোয়ার হোসেন সাগর

কক্সবাজারের চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের নতুন চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফের ভাগনেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ফল ঘোষণার পর।

বদরখালী ইউনিয়নে রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে সোমবার দুপুরে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমাণ গণি বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

নিহত গিয়াস উদ্দিন মিন্টুর বাড়ি ১ নম্বর ওয়ার্ড ঢেমুশিয়া পাড়ায়।

স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, রোববার বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফ জয়ী হন। ফল ঘোষণার পর মিছিল বের করেন তিনি। গাউসিয়া মসজিদ হেফজখানা এলাকায় রাত পৌনে ১১টার দিকে মিছিলে হামলা চালান চশমা প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী হেফাজ সিকদারের এক থেকে দেড় শ সমর্থক।

এ সময় আরিফের ভাগনে গিয়াস উদ্দিনকে লাঠি ও দা দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে মিন্টুর মৃত্যু হয়।

এর আগে রোববার ভোটের পর সহিংসতায় নরসিংদীতে দুজন এবং লক্ষ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নীলফামারীতে তিনজন নিহত হয়েছেন।

ভোট শেষে রোববার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, সহিংসতাহীন নির্বাচন হয়েছে।

আগের দুই ধাপের তুলনায় এবার সহিংসতা কম হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘এবার সহিংসতা যাতে না হয়, তার জন্য আগে থেকেই বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের চেয়ে বেশি তৎপর ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও সহনশীল আচরণ করেছেন। এতে আগের চেয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাও কম হয়েছে।

‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন কমিশন একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটবে বলেও আশা করে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ এবং প্রার্থীদের সহনশীল এমন আচরণ অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে সহিংসতা আরও কমবে।’

তার এই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই বিভিন্ন জেলা থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও প্রাণহানির খবর আসতে থাকে।

এর আগে দ্বিতীয় ধাপের ভোটের আগে-পরে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু নরসিংদীতেই মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। এ ছাড়া মাগুরায় ৪, মেহেরপুরে ২ এবং কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নিহত হয়েছেন ১ জন করে।

এ বিভাগের আরো খবর