ময়মনসিংহকে ২০১৫ সালে বিভাগ ঘোষণার পর শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ, যান চলাচলও বেড়েছে। অথচ সড়কগুলোর প্রশস্ততা বাড়ানো হয়নি।
অপ্রশস্ত সড়কে অনিয়ন্ত্রিত রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানের কারণে এখন চলাচলের অনেকটাই অযোগ্য হয়ে পড়েছে শহরটি।
নগরীর ভেতর দিন-রাত সব সময় রিকশা-অটোরিকশা ছাড়াও বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের কারণে ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকে। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে যেতেও গাড়িতে বসে থাকা লাগে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত।
হেঁটে চলাচল করাও কঠিন। শহরের অধিকাংশ সড়কেই নেই ফুটপাত। আর সড়কে গাড়িগুলো এমনভাবে জট লেগে থাকে তার পাশ বা মাঝ দিয়েও সামনে এগোনো যায় না।
নগরবাসী জানান, ২০০ বছরের পুরোনো শহর ময়মনসিংহে বর্তমানে মানুষ বেড়েছে কয়েক গুণ। এ জন্য যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে সড়কগুলো আছে আগের মতো সরু ও অপ্রশস্ত। এতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ তাদের জীবন।
তারা আরও জানান, অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের পাশাপাশি যানজটের আরেক কারণ নগরীর ভেতর দূরপাল্লা ও স্থানীয় মিলিয়ে তিনটি টার্মিনাল। যেখান থেকে প্রতিদিন কয়েক শ বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। টার্মিনাল থেকে নগরীর মধ্য দিয়েই বাসগুলো আসা-যাওয়ার সময় যানজট তৈরি করে। এর মধ্যে পাটগুদাম ও ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের পুরো এলাকায় যানজট হয়ে পড়েছে নিত্যসঙ্গী।
শহরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকার ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসায়ী অরুপ পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে এ এলাকায় ব্যবসা করছি। সে সময় নগরীর কোনো সড়কেই যানজট দেখিনি। তবে এখন যানজটই নিত্যদিনের সঙ্গী।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ১০টায় দোকানে আসি। এ সময় থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। রিকশা আর অটোরিকশার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় অপ্রশস্ত সড়কগুলোতে যানবাহনের অবস্থা পুরাই হযবরল।’
আমিনুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, লাইসেন্স পাওয়া লাল ও সবুজ রঙের ইজিবাইকগুলো নগরীর ভেতরের বিভিন্ন সড়কে জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ হয়ে এক দিন পর পর চলাচল করার নিয়ম, অথচ চালকরা প্রতিদিন চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ রাতারাতি ইজিবাইকের রং বদলে ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে প্রতিদিন চালাচ্ছেন। এ কারণে নগরীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন বলছে, শহরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করে ১২ হাজার লাইসেন্সপ্রাপ্ত তিন চাকার যান। পাশাপাশি কিছু অবৈধভাবেও চলছে। গত ২ মাসে অবৈধ রিকশা-অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমীন কালাম অভিযোগ করেন, নগরীর অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র বড়বাজার ও ছোটবাজারের পুরো রাস্তা এখন ট্রাক-পিকআপ ভ্যানের স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া চলাচলের লাইসেন্স পাওয়া তিন চাকার যানবাহনের চেয়ে দ্বিগুণ যান অবৈধভাবে চলাচল করছে। ফলে যানজট আরও তীব্র হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নগরীর যানজট পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অসহনীয়। রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল সীমিত করার পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া জরুরি। এ ছাড়া অবিলম্বে শহরের সড়কগুলো প্রশস্ত না করা হলে ভবিষ্যতে এই নগরী অচল হয়ে পড়বে।’
জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নগরীর যানজট নিরসনে সড়কগুলো প্রশস্তকরণের বিকল্প নেই। এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনে নগরবাসীকে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
‘নগরীর পাটগুদাম মোড় বাসস্ট্যান্ড, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড ও টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড সরানোসহ ট্রাফিক মোড়গুলো প্রশস্ত করে ইন্টারসেকশন তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি নগরীর ভেতরের ১০টি রেলক্রসিং অন্যত্র সরানো প্রয়োজন।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘শহরের রাস্তা প্রশস্তকরণ, নতুন বাস টার্মিনাল ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো শেষ হলে দুর্ভোগ কমে আসবে।