বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রকল্পের মেয়াদের চেয়ে পরামর্শকের মেয়াদ বেশি

  •    
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:২৭

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ সরাসরি রেলপথ নির্মাণ হলে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার রেলপথের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের বেশি কমে যাবে। এ-সংক্রান্ত প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাবে আর দুই বছরের মধ্যে। তবে যে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের মেয়াদ থাকবে বাড়তি আড়াই বছর। এটিকে নিয়মের ব্যত্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে তিন বছরে এ প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি বলতে সামান্যই। এতে পরামর্শক নিয়োগ হয়েছে মাত্র কিছু দিন আগে।

প্রকল্পের মেয়াদ আর দুই বছরের কম থাকলেও মেয়াদের পরও বাড়তি আড়াই বছরের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়, যা উন্নয়ন শৃঙ্খলার পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এতে ভারতীয় ঋণ পাওয়া যাবে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৮ সালের জুলাইতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশের মতো।

প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র দেড় বছরের কিছু বেশি, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। তবে গত সেপ্টেম্বরে এ প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। দেড় বছর মেয়াদ থাকলেও পরামর্শক নিয়োগ পেয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।

দুই ভাগে এ কাজ করবে ভারতের দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রাইটস লিমিটেড ও আরভি অ্যাসোসিয়েটস আর্কিটেক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড।

প্রথম ধাপে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হালনাগাদ করা, বিস্তারিত নকশা তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠান দুটিকে সময় দেয়া হয়েছে ১৩ মাস। দ্বিতীয় ধাপে ৩০ মাসের জন্য নির্মাণকাজ তদারক করবে প্রতিষ্ঠান দুটি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদন জমা দিলে রেললাইন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করাসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে।

চুক্তি হয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। চুক্তিমূল্য ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ের জন্য পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে তা করা যেতে পারে। তবে সে রকম নজির নেই বললেই চলে।

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও তা কত সময়ের জন্য বাড়বে তাও আগে থেকে বলা যায় না। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে নিশ্চয়তার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্প সংশোধনের পরই কেবল বাড়তি মেয়াদের জন্য পরামর্শক নিয়োগ পেতে পারে। ঠিকাদার নিয়োগ বা পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এমনটি করা হলে তা অবশ্যই উন্নয়ন প্রকল্পের শৃঙ্খলার ব্যত্যয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো প্রকল্পেই মেয়াদের পর বাড়তি সময়ে কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। কারণ প্রকল্পের যেখানে মেয়াদই নেই, সেখানে পরামর্শক নিয়োগ পাবে কীভাবে? পরামর্শকের ফি-ই বা আসবে কোথা থেকে? এ ক্ষেত্রে হয়তো মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব পাঠানোর কথা। প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে মেয়াদ বাড়লেই সেই মেয়াদের জন্য পরামর্শক বা অন্য কোনো পক্ষের চুক্তি করা যাবে।

‘অথবা বিশেষ বিবেচনায় পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতি নিয়ে মেয়াদ পরে বাড়তে পারে এমন কারণ দেখিয়ে সম্মতিপত্র চাইলে তা বিবেচনায় নেয়া হয়। কিন্তু রেলের কোনো প্রকল্পের বিষয়ে এমন কোনো চিঠি আসেনি।’

মেয়াদের পরও পরামর্শক নিয়োগ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, জটিলতা কাটিয়ে এটির কাজ আবার শুরু হচ্ছে। মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে থাকলেও প্রকল্পটি সংশোধন করা হবে, এ জন্য বাড়তি সময়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হবে।’

প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ জুন পর্যন্ত, তবে আমাদের কনসালট্যান্ট নিয়োগের মেয়াদ ২০২৫ পর্যন্ত। এ প্রকল্প রিভাইজ করতে হবে। তাই পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

প্রকল্পের মেয়াদ কম কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ বেশি সময়ের জন্য, এটা আইন মেনে হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এখন কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা স্টাডি করবে। তারপর কাজ শুরু হবে। তবে করোনার কারণে কাজে অনেক বিলম্ব হয়েছে। তা ছাড়া কনসালট্যান্ট প্রথম ১৩ মাস ডিটেইল ডিজাইন করবে। তারপর ৩০ মাস সুপারভিশন করবে।’

প্রকল্পের মেয়াদসংক্রান্ত কোনো সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখনও প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। এখনই পাঠাব না। আগে ডিটেইল স্টাডি হবে, তার উপর ভিত্তি করে যদি ব্যয় কম বা বেশি প্রাক্কলন করা হয়, তার ভিত্তিতে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হবে। আসলে বাংলাদেশে তো অনেক প্রকল্প পাস হয়, কিন্তু একদম ডিউ টাইমে তো আর কোনো প্রজেক্ট শেষ হয় না। এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়বেই।’

তিন বছরে কাজ শুরু হয়নি কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে টেন্ডারিং হলো, কনসালট্যান্ট নিয়োগ হয়েছে, এটা তো প্রকল্পের কাজ।’

কী থাকবে প্রকল্পে

রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে ঢাকা থেকে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে ট্রেন যায় পাবনার ঈশ্বরদী ঘুরে বগুড়ার সান্তাহার হয়ে। এ কারণে শত কিলোমিটার বাড়তি পথ পাড়ি দিতে হয় উত্তরের যাত্রীদের। রেলের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে বগুড়ার বর্তমান দূরত্ব ৩২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে কাহালু সান্তাহার-আব্দুলপুর-ঈশ্বরদী বাইপাস-জামতৈল-শহীদ এম মনসুর আলী (বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়) রুটই প্রায় ১৮৭ কিমি দীর্ঘ।

তাই ঢাকা থেকে সরাসরি বগুড়ার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ বহুদিনের। ২০০৫ সালে এই রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে তখন প্রাক-সমীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু অর্থায়ন না হওয়ায় প্রকল্পটি এগোয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের নভেম্বরে বগুড়া সফরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের নির্দেশ দেন। ২০১৭ সালে ভারতের তৃতীয় লাইন অফ ক্রেডিটের (এলওসি) ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।

এতে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়া রায়পুর-রায়গঞ্জ-শেরপুর-রানিরহাট রুটে সরাসরি রেল সংযোগ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বগুড়া স্টেশন থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশনের মধ্যকার রুটের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া রানিরহাট স্টেশন থেকে কাহালু স্টেশনের মধ্যে রুটে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হবে। এ জন্য ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে সরাসরি এ রেল যোগাযোগের ফলে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পথ এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ভ্রমণের সময় কমবে। নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে ঢাকা-বগুড়ার দূরত্ব কমে হবে ২১২ কিলোমিটার। এ রুটের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ নিশ্চিত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর