ঢাকায় পরিকল্পিত নগর পরিবহন চালুর উদ্যোগ শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে কাঙ্ক্ষিত নগর পরিবহন সেবা চালুর উদ্যোগ ঝুলে গেছে। ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে এই রুটে বাস চলার কথা থাকলেও বাস মালিকদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ২৬ ডিসেম্বর থেকে এই রুটে একশ’ বাস নিয়মিত চলাচল করবে-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকার দুই মেয়র।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে রোববার বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের ১৯তম বৈঠক শেষে দুই মেয়র সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানান। ঢাকা শহরের পরিবহনে শৃঙ্খলা আনার জন্য বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সভাপতিত্ব করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাস মালিকদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন ঢাকার দুই সিটি মেয়র। তবে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সহযোগিতা ছিল, আছে এবং থাকবে। এটা ভুল বোঝাবুঝি মাত্র।’
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা ১ ডিসেম্বর থেকে ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে পাইলটিং কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নির্ধারিত তারিখে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন খাতে অসহযোগিতার কারণে আমরা হোঁচট খেয়েছি। কিন্তু তাতে আমরা পিছপা হইনি। গণপরিবহনে দীর্ঘদিনের যে বিশৃঙ্খলা তাতে অনেক অংশীজন রয়েছে। সবাইকে শৃঙ্খলার আওতায় আনাটা দুরূহ কাজ।’
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গেই কাজটা হাতে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা সংকল্পবদ্ধ। ১ ডিসেম্বর না করা গেলেও ওই মাসেই তা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগের মিটিংয়ে বলা হয়েছিল যে ৪২০টি রুট পারমিট দিলেই ১২০টি নতুন গাড়ি তারা নামাবেন। বাস মালিকরা গত মিটিংয়ে এমন প্রতিশ্রিুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ৪২০টি রুটে পারমিশন দিতে চাইনি। তারপর দক্ষিণের মেয়র মহোদয়ের কাছে তারা অনুরোধ করলেন। কিন্তু শর্ত ছিল এটাই। সেই শর্তের ভিত্তিতে আমরা চুক্তিতে সই করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ওনারা যে কথা দিয়েছিলেন সে অনুযায়ী আমরা বাস পাইনি। এখানে কথার বড়খেলাপ হচ্ছে। রুটটিতে নির্ধারিত দিনে বাস সার্ভিস চালু না হওয়ার এটাই আসল কারণ।
‘এ অবস্থায় ঘাটার চর থেকে কাঁচপুরের সাইনবোর্ড পর্যন্ত বিআরটিসির সহায়তায় ২৬ ডিসেম্বর থেকে একশ’ বাস নামানোর উদ্যোগ নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি। বিআরটিসি বাস দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এ ছাড়া ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে কেউ এই রুটে বাস চালানোর আবেদন করলে সুযোগ দেয়া হবে। আমরা এখন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের কিছুটা কঠোর হতে হয়েছে।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন রুটে গাড়ি চালাচলে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। আজকের মিটিংয়ে আরো সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট রুট ছাড়া অন্য রুটে কেউ বাস চালাতে পারবে না। ঢাকা শহরে রুট পারমিটবিহীন অনেক গাড়ি চলছে, সেগুলো আর চলতে দেয়া হবে না। ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, ডিএমপিসহ আমরা অভিযানে নামবো। যারা এক রুটে পারমিট নিয়ে অন্য রুটে গাড়ি চালাচ্ছে তাদেরও ধরা হবে। আমরা সবকিছুকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাচ্ছি। নতুন রুট পারমিটও আর দেয়া হবে না।’
উত্তর সিটির মেয়র বলেন, ‘ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর নতুন রুটে পিক আওয়ারে যাত্রী দাঁড়াবে (অপেক্ষার সময়) ৫ মিনিট আর অফ পিক আওয়ারে ১০ মিনিট। এ ছাড়া নতুন রুটে ই-টিকিটিং সিস্টেমে বাসগুলো চলবে।
রুট পারমিট ছাড়া চলা নিষিদ্ধ ও নতুন রুট পারমিট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি কমিটির আছে কীনা জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেটির পূর্ণাঙ্গ কার্যপরিধির আওতায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূল কথা হলো ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা।’
মেয়র তাপস বলেন, ‘এই রুটে একশ’ বাসের মধ্যে বিআরটিসি দিচ্ছে ৩০টি। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আমরা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন বিনিয়োগকারী নেব। আমরা ৭০টি বাসকে রুট পারমিট দেব। সেটা একটি প্রতিষ্ঠান হতে পারে, আবার দশটিও হতে পারে। এরপর প্রয়োজন বুঝে বাসের সংখ্যা কমানো বা বাড়ানো হতে পারে। বাস মালিক সমিতিকে সুযোগ দেয়া হয়েছি। তারা ব্যর্থ হওয়ায় আমরা এটি উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। এখন অন্যরাও আসতে পারবে।
ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে বর্তমানে চলাচল করা বাসগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে কীনা জানতে চাইলে মেয়র তাপস বলেন, ‘বিদ্যমান বাসগুলো চলতে পারবে। তবে শর্ত হলো, ২০১৯ সালের আগের কোন বাস চলতে পারবে না। রুট পারমিট ও বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। এসব বাসের মালিক ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করলে বিবেচনা করা হবে।
‘আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে চিহ্নিত এক হাজার ৬৪৬টি রুট পারমিটবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। রুট পারমিটবিহীন অবৈধ বাসগুলো জব্দ করে ধ্বংস করা হবে।’