জাতীয় সংসদের সদস্যদের জন্য অবসর ভাতার সুবিধা রাখার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অনেক সংসদ সদস্য আছেন, ১৫-২০-২৫ বছর আছেন। তারা সৎভাবে কাজ করেন। প্রশাসনের বা অনেক জায়গায় অবসরের পর আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। অনেক দেশে এমপিদের অবসর সহায়তা দেয়া হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা করার দাবি করছি। তাহলে যারা সৎভাবে কাজ করতে চান, তারা মানবেতর জীবনে পড়বেন না।’
রোববার সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকের তুলনায় কম ভাড়ায় যাতায়াত করে। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বাস ভাড়া অর্ধেক চেয়েছে। এটা অনেক দেশেই আছে। শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার যে দাবি করছে, আমি মনে করি সেটা যৌক্তিক।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাসের মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করতেই পারেন। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে দেশব্যাপী মানুষ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হলো। তেলচালিত বাস বন্ধ হলো। সেটা হতেই পারে, মানলাম। গ্যাসচালিত বাস বন্ধ হলো কেন?’
হঠাৎ করে সারা দেশে পরিবহন বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক নয় বলেও মন্তব্য করেন বিরোধীদলীয় উপনেতা।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ বা সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সারা দেশে পরিবহন বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক নয়। আমাদের বিআরটিএ বলে একটা সংস্থা আছে। যাত্রীদের জিম্মি করে অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে যারা দাবি আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ দেখছি না।’
জি এম কাদের বলেন, ‘মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে। ডিজেলচালিত বাসের জন্য একটা আর গ্যাসের জন্য একটা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে একই ভাড়া। একটা অনিয়মের চিত্র দেখা গেল। পত্রিকায় দেখলাম, যাত্রীরা সরকারনির্ধারিত ভাড়া দিয়ে যেতে চাইলে বাস থেকে নামিয়ে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পরিবহন সেক্টর আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করছে? সরকার? সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রক আছে এখানে? নাকি মালিক-শ্রমিক সমিতি করছে? সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি এই খাতের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করছে?’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চুরি হওয়া নথি নিয়েও উদ্বেগ জানান কাদের।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম নিয়ে অনেক দিন ধরে কথা বলছি। দুর্নীতি দূর হয়েছে এমন মনে হচ্ছে না। সম্প্রতি কেনাকাটাসংক্রান্ত ১৭টি নথি গায়েব হয়ে গেল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেয়া হলো, ফাইল ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। যেখানে দুর্নীতি হয়, সেখানে ফাইল গায়েব করে দিলে আর সাজা হয় না। ফাইল গায়েবে বোঝা যায় দুর্নীতি হচ্ছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি খুব কি বেশি প্রয়োজন ছিল? আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে কমানো হয় না। কিন্তু বাড়লে বাড়ানো হয়। করোনার সময় আমরা সেটা করিনি। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমবে বলে অনেকে মনে করছেন। এটি দেশের বাজারে পুনর্নির্ধারণ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, বেকারত্বের হার বাড়ছে। খোলাবাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ চোখে পড়েনি। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। বেকারত্ব বাড়ছে, দারিদ্র্য বাড়ছে আয় কমছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।’