বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, ১ প্রাণহানিতে ভোট হলো তৃণমূলে

  •    
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:৩৪

দ্বিতীয় ধাপের আগে, ভোটের দিন এমনকি ভোটের পরেও ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির পর এ পর্যায়ের ভোটে রক্তপাত বন্ধে ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। সহিংসতা এবারের ভোটেও দেখা গেছে কিছু জেলায়। তবে প্রাণহানি হয়নি কোথাও।

বিক্ষিপ্ত সহিংসতা, এক ছাত্রলীগ নেতার প্রাণহানি ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হাজার ইউনিয়নের ভোট, শুরু হয়েছে গণনা।

রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু করে ভোট চলেছে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।

দ্বিতীয় ধাপের আগে, ভোটের দিন এমনকি ভোটের পরেও ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির পর এ পর্যায়ের ভোটে রক্তপাত বন্ধে ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

সহিংসতা এবারের ভোটেও দেখা গেছে কিছু জেলায়। তবে বিকাল পর্যন্ত কোথায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে লক্ষ্মীপুরের একটি কেন্দ্রে সংর্ঘষে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন।

রামগঞ্জের ইছাপুর ইউনিয়নের নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এই সংঘর্ষ হয়।

নিহত সজিব হোসেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহনাজ আক্তারের সমর্থক ছিলেন।

রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ওই কেন্দ্রের সামনে ভোট শেষে আগে নৌকা ও এর বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আমির হোসেন খানের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এটি সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়। সে সময় মাথায় আঘাত পান সজিব হোসেন। তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এছাড়া জেলার রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশীর পশ্চিম চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন আহত হন।

কুমিল্লার বড়ুরায় ‘কেন্দ্র দখল করতে’ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও এক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালানো হয়।

তাদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে জানিয়েছেন আহত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয় ওই পুলিশ কর্মকর্তার পিস্তল।

উপজেলার ডেউয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আহত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আমার কক্ষে ছিলাম। এ সময় চায়নিজ কুড়াল দিয়ে আমাকে আঘাত করা হয়। পরে আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বাম হাতে ১১টি সেলাই পড়েছে।’

বরুড়া উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, হামলার ঘটনার পর ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বাতিল করা হবে।

এ ছাড়া জেলার দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের বাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে অন্তত ৫০ জন বহিরাগত হেলমেট পরে কেন্দ্রে ঢোকে। তারা প্রায় ৩০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। সে সময় এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ রাখা হয়।

নরসিংদী সদরের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গোলাগুলিতে অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নরসিংদীর চরাঞ্চল করিমপুর, নজরপুরের দিলারপুর, কালাই গোবিন্দপুর, শীলমান্দি ও আমদিয়ায় এসব ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষগুলো হয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।

আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম সংঘর্ষের ঘটনাগুলো নিশ্চিত করেছেন।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একটি ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বৌলজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে রোববার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বানিজ মিয়া।

জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার কবাখালী, বোয়ালখালী ও মেরুং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহ্‌মিদা মুস্তফা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বেনাপোলের শার্শার বাগআচড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস কবির বকুল।

তিনি অভিযোগ করেন, কোনো কেন্দ্রেই তার এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাদের মারধর করা হয়েছে। ভয়ে তিনিও ঘর থেকে হতে পারেননি, ভোটও দিতে পারেননি।

এসব অভিযোগ তুলে নিজ বাড়িতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

ব্যালটবক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়। আটক করা হয় ৭ জনকে।

উপজেলার সম্মানদী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে বিকালে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউসুফ উর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, ব্যালট ছিনতাইয়ের কথা জানাজানি হলে কেন্দ্রের বাইরে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ছিনতাই হওয়ায় ব্যালট বাক্স উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।

ফেনীতে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগে দুই উপজেলার দুটি কেন্দ্র থেকে প্রার্থীসহ ২৫ জনকে আটক করে পুলিশ। কেন্দ্রে গোপন ভোটারের সঙ্গে যাওয়ায় এক পোলিং এজেন্টকেও প্রত্যাহার করা হয়।

পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় রোববার সকালে এ ঘটনাগুলো ঘটে।

ভোলার চরফ্যাশনে চর কুকরীমুকরী ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কবির হোসেনের অভিযোগ, প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেয়ার প্রতিবাদ করায় তার লোকজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এতে তিনিসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে এক কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, নৌকার সিল মারা ১৩৪টি ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়।

বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে রোববার বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মদ বলেন, ‘আড়াইটার দিকে হঠাৎ চারজন আমার কক্ষে ঢুকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থক পরিচয় দিয়ে ২০০ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকার সিল মারা শুরু করেন। এ সময় সেখানে অন্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা চলে এলে ওই চারজন পালিয়ে যান। তাদের ফেলে যাওয়া ব্যালট পেপারের মধ্যে ১৩৪টি সিল মারা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এগুলো বাতিল করা হয়েছে।’

মেহেরপুর গাংনীর ধানখোলা ইউনিয়নে ভোট চলাকালে সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে দুজনকে।

ময়মনসিংহ ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গুজিয়াম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি জানান, এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষের সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল দেয়া শুরু করে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তারা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকে। যে ব্যালটগুলো ছিনতাই হয়েছে সেগুলো বাতিল করা হবে।

নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ তুলে নেত্রকোণার কলমাকান্দার এক কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সেখানে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

কলমাকান্দার খারনৈ ইউনিয়নের বামনগাও মিশনারি স্কুল কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।

ভোট স্থগিত হয় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের ৬টি কেন্দ্রে। হামলা, ভাঙচুর, বিশৃঙ্খলার কারণে নির্বাচন অফিস এই সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

এ ছাড়া জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে দিনাজপুরে ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ এবং হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা ও গাইবান্ধায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে ১ হাজার সাতটি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে সাতটিতে ভোট স্থগিত করা হয়।

ইউপির পাশাপাশি ভোট হয়েছে ৯ পৌরসভাতেও। এর মধ্যে নীলফামারীর জলঢাকা ও কক্সবাজার পৌরসভায় শুধু কাউন্সিলর পদে ভোট হয়েছে।

১ হাজার ইউপিতে ৫৬৯ জন প্রার্থী আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যানের সংখ্যা ১০০। আর সাধারণ সদস্য ৩৩৭ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা ১৩২।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর