বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বচ্ছ নিয়োগে প্রশংসিত পুলিশ

  •    
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:৫০

দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের চাকরিতে স্বচ্ছ নিয়োগে আনন্দে ভাসছে অনেক পরিবার। কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা ও হয়রানি ছাড়া মেধার ভিত্তিতে এমন নিয়োগে পুলিশও পাচ্ছে প্রশংসা।

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার পাছ ইরতা গ্রামের সামিয়া ইসরাত। তার বাবা সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন দুই বছর ধরে অসুস্থ। ছোট ভাই বিপ্লব পড়ছে মাধ্যমিকে। মা গৃহিণী।

চারজনের সংসারে অসুস্থ বাবা ছাড়া উপার্জন করার কেউ নেই। অভাবের সেই সংসার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ডিগ্রি পড়ার জন্য আবেদন করেন সামিয়া।

এর মধ্যে খোঁজ পান বাংলাদেশ পুলিশে চাকরির নিয়োগের। এরপর মাত্র ১৩০ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে পেয়ে গেছেন পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি। দীর্ঘদিনের অভাবে সংসারে মেয়ের চাকরির খবরে তাই বাবা-মায়ের চোখে ঝরছে আনন্দাশ্রু।

শুধু সামিয়া নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের চাকরিতে স্বচ্ছ নিয়োগে আনন্দে ভাসছে অনেক পরিবার। কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা ও হয়রানি ছাড়া মেধার ভিত্তিতে এমন নিয়োগে পুলিশও পাচ্ছে প্রশংসা।

নিউজবাংলার জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-

টাঙ্গাইল: পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর সামিয়া নিউজবাংলাকে জানান, পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে বাবার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে করেছিলেন আবেদন। এরপর ১৮ নভেম্বর টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস মাঠে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯ নভেম্বরের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা হয় ২৬ নভেম্বর। ওই দিন রাত ১টার দিকে ফল প্রকাশ করেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।

সামিয়া বলেন, ‘এ সময় আমার নাম ১১ জন মেয়ের মধ্যে ৫ নম্বরে চলে আসে। আমার শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। আল্লাহ আমার পরিবারের প্রতি নজর দিছে। এখন আমার বাবার চিকিৎসা ও পরিবারটাকে সহযোগিতা করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই চাকরিটা পেতে আমার কোনো প্রকার কারও কাছে যেতে হয়নি। কোনো প্রকারের অতিরিক্ত টাকা লাগেনি৷ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, মাত্র ১৩০ টাকায়ই আমার চাকরি হয়েছে।

‘আজ চাকরিটা পেয়ে বুঝলাম পুলিশের চাকরি নিতে কোনো ঘুষ লাগে না। নিজের যোগ্যতা দিয়ে আজ আমি এ পর্যন্ত। সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন দেশের সেবা করতে পারি।’

সামিয়ার বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মেয়ের চাকরির কথা শুনে খুব ভালো লাগছে। ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ পুলিশকে, এ ধরনের ঘুষমুক্ত একটি চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য। এখন পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলার স্বপ্ন দেখতে পারব মেয়ের মাধ্যমে।’

টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, জেলায় ৩ হাজার চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪৯৭ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৬৫ জনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে ৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৪ ও নারী ১১ জন। মেডিক্যাল পরীক্ষার পর তাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে।

ফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইসরাত জাহান লুনা, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন আহমেদ।

দিনাজপুর: দিনাজপুরে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া ৬২ জনকে আবেদন ফির টাকাটাও খরচ করা লাগেনি। মানবিক দিক বিবেচনা করে আবেদনের পুরো টাকাই দিয়ে দিয়েছে জেলা পুলিশ।

নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘পুলিশে চাকরিতে আবেদন করার আগে ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়। এ ছাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা আবেদনের জন্য কাগজপত্র ফটোকপি করার প্রয়োজন পড়ে। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের খরচ হওয়া ১২০ টাকা উপহারস্বরূপ ফেরত দিয়েছি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আইজিপি স্যার পুলিশে টিআরসি নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা রাখছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুরে এই নিয়োগ কার্যক্রম সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে। আইজিপি স্যার নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে আমূল পরিবর্তন করেছেন। চাকরি নয়, সেবার মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

চাকরি পাওয়ার পর বীরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বর্ষা রানি রায় বলেন, ‘বিনা টাকায় চাকরি পেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পুলিশ সুপার স্যার নিজে মাঠে থেকে আমাদের সাহস জুগিয়েছেন। স্যার বলেছেন, কোনো ধরনের দুর্নীতি হবে না। কোনো অর্থ লেনদেন হবে না। স্যার সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন।’

চিরিরবন্দর উপজেলার পাটাইকুরি গ্রামের শরিফুল আলম বলেন, ‘বাবা সংসারের খরচ জোগানোর জন্য ঢাকায় রিকশা চালান। আমরা খুবই গরিব। পুলিশের লাইনে দাঁড়ানোর সময় এসপি স্যার বলেছিলেন এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হবে না। এখানে তোমরা মেধা আর যোগ্যতায় চাকরি পাবা। স্যার তার এই কথা রাখছেন।’

সদর উপজেলার কমলপুর দাইনুর এলাকার রাকিবুল হাসান বলেন, ‘সংসার চালানো এবং আমাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে বাবা ও মা প্রায় ১০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টসে চাকরি করেন। আমি নানিবাড়িতে থেকে বড় হয়েছি।

‘আমার জন্য বাবা-মা খুবই কষ্ট করছেন। বিনা পয়সায় পুলিশে চাকরি পেয়ে আজ আমি ও আমার বাবা-মা খুবই খুশি। আমি যেন সারা জীবন নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারি সে দোয়া চাই।’

কুড়িগ্রাম: জেলার আবেদন ফি দিয়েই কনস্টেবল হয়েছেন ৪৩ জন। দেশের দারিদ্র্যপীড়িত জেলায় এমন স্বচ্ছ নিয়োগ হওয়ায় অনেক পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা।

কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, ‘দারিদ্র্যসীমার নিচের জেলা থেকে নিখুঁত যাচাই-বাছাই করাটা ছিল বেশি চ্যালেঞ্জিংয়ের কাজ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে সঠিক ছেলেমেয়েকে বের করে আনতে পারাটাই আত্মতৃপ্তি।

‘আইজিপি স্যারের নির্দেশে সেই কাজটি করতে পেরে জেলা পুলিশ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

এ ছাড়া একইভাবে হবিগঞ্জে চাকরি পেয়েছেন ৪৪ জন।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন টাঙ্গাইল প্রতিনিধি শামীম আল মামুন, দিনাজপুর প্রতিনিধি কুরবান আলী, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন ও হবিগঞ্জ প্রতিনিধি কাজল সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর