বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেপিসিএল নিয়ে ধোঁয়াশা, ক্ষতিতে বিনিয়োগকারীরা

  •    
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৩৩

মেয়াদ বাড়ানোর চু্ক্তির অগ্রগতি কী, জানতে চাইলে কেপিসিএলের কোম্পানিটির সচিব মোজাম্মেল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে। বিশেষ কোনো খবর আসলে তা অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে।’

আলোচনার পর আলোচনা। তারপরও কোনো সমাধান নেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত মে মাসে। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু হবে কি হবে না এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে টাকা হারিয়ে শেয়ারধারীরা হতাশ।

খুলনা পাওয়া কোম্পানি বা কেপিসিএল নামে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সৃষ্ট জটিলতার এখনও অবসান হয়নি।

এই অবস্থায় গত দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে প্রায় ৩৭ শতাংশ এবং এই দর ক্রমেই নিম্নমুখী। বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রায়ই কোম্পানির মেয়াদ বাড়ানোর অগ্রগতির খবর আছে কি না, এই প্রশ্ন রাখছেন।

যে আইনের অধীনে ভাড়াভিত্তিক বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর বিলে জাতীয় সংসদ সায় দিয়েছে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু এর পরে দুই মাসেও কেপিসিএলসহ চার কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা চুক্তিতে আসতে পারেনি।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণ কবে হবে, সে জন্য তারা প্রশ্ন করে যাচ্ছেন, কিন্তু কোম্পানি বা সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আসছে না।

খুলনায় কেপিসিএলের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

এর মধ্যে সামিট পাওয়ারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে দুইবার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দিয়ে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানানো হয়েছে। তবে কেপিসিএলের পক্ষ থেকে কোনো বার্তাই দেয়া হচ্ছে না।

গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব প্রকাশের সময় কেপিসিএলের আয় নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোম্পানিটি মার্চ শেষে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় করেছিল শেয়ারে ২ টাকা ৬২ পয়সা। এরপর আরও দুই মাস চলেছে দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র। পাশাপাশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পায়রার ৩৫ শতাংশের মালিকানার বিপরীতে লভ্যাংশও যোগ হয়েছে।

কোম্পানিটি গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ইউনাইটেড পায়রা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ ঘোষণা করায় কেপিএসএলের আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা।

অথচ কোম্পানিটি চূড়ান্ত আয় দেখিয়েছে শেয়ারপ্রতি ৮৭ পয়সা। অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখানো হয়েছে ১ টাকা ৭৫ পয়সা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্তও শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানিটি। গত বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৯১ পয়সা।

মেয়াদ বাড়ানোর চু্ক্তির অগ্রগতি কী, জানতে চাইলে কেপিসিএলের কোম্পানিটির সচিব মোজাম্মেল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে। বিশেষ কোনো খবর আসলে তা অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে।’

গত ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ভবনে কেপিসিএল, সামিট ছাড়াও ওরিয়ন ও ডাচ্-বাংলা পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠক হয় কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা নিয়ে।

সরকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ দুই বছর বাড়াতে রাজি। তবে আগের মতো বিদ্যুৎ না কিনলে কেন্দ্রের ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে চাইছে না। তবে কোম্পানিগুলো ন্যূনতম চার্জ চাইছে। সেটি না দিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার গ্যারান্টি চাইছে তারা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়াদ বাড়ানোর যে ফাইলে সই করেছেন, তাতে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া অনুমোদন দেয়ার কথা বলা আছে।

তবে বৈঠকে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার জন্য গ্যারান্টি চাওয়া হয়। তারা বলেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে এই বিষয়ে আগে থেকে সিদ্ধান্ত না হলে তাদের পক্ষে কোম্পানি চালানো কঠিন।

দুই পক্ষের মধ্যে এই মতভিন্নতা মেটাতে আবার বৈঠকের কথা বলা হয় দুই মাসের সেই আলোচনা শেষে। কিন্তু এরপর অনানুষ্ঠানিকভাবে কথাবার্তা হলেও আনুষ্ঠানিক আলোচনার তারিখ এখনও পড়েনি।

গত ২১ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ার পর কেপিসিএলের শেয়ারদর কমার চিত্র

বিদ্যুতের দামসহ আরও বেশ কিছু বিষয়েও সমঝোতায় আসা যায়নি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুতের দাম কমাতে চাইছে। তাদের যুক্তি হলো, কেন্দ্রগুলো গত ১০ বছরে যে ব্যবসা করেছে, তাতে তাদের কেন্দ্র স্থাপনের ব্যয় উঠে এসেছে। এখন ইউনিটপ্রতি দাম কমাতে হবে।

এরপর চারটি কোম্পানির পক্ষ থেকে সরকারকে একটি রেট দেয়া হয়েছে, তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সেই রেট মানতে চাইছে না। তারা দাম আরও কম দিতে চায়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়ন নিয়ে এমন অনিশ্চয়তায় প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে কেপিসিএল ও সামিট পাওয়ারের দর। এর মধ্যে সামিটের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। এটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু সেটিও আটকে আছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত একজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেছেন, এখন শীতকাল। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা কম। এই অবস্থায় সরকারেরও খুব একটা তাড়া নেই। তারা চেষ্টা করেছিলেন এই মাসের মধ্যে একটি সমঝোতায় আসতে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না, এ বিষয়টি এখন নিশ্চিত প্রায়। এখন ডিসেম্বরে বৈঠকে বসার চেষ্টা করছেন তারা।

দর কমছে ক্রমাগত

গত ২১ সেপ্টেম্বর কেপিসিএলের শেয়ার দর একপর্যায়ে ওঠে ৫২ টাকা ৫০ পয়সা। তবে চুক্তি হচ্ছে না, এই বিষয়টি কোনোভাবে জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরেই দাম কমে যায়। এরপর থেকে ক্রমাগত কমছে। পুঁজিবাজারে সাধারণত কোনো কোম্পানির শেয়ার দর প্রতিদিনই বাড়ে না বা প্রতিদিনই কমে না।

কেপিসিএলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সেদিনের পর মোট ৪৫ কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে ৩২ কর্মদিবসই শেয়ার দর কমেছে, বেড়েছে ১১ কর্মদিবস আর দুই কর্মদিবস দাম ধরে রাখতে পেরেছে।

এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর হারিয়েছে ১৯ টাকা ৪০ পয়সা বা ৩৬.৯৫ শতাংশ।

গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ১০ পয়সা।

এই দরই কেপিসিএলের সর্বনিম্ন দর নয়। চলতি বছর সব শেয়ারের বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর একপর্যায়ে শেয়ার দর ৩১ টাকা ৩০ পয়সায় নেমে আসে। সেটি গত ২৮ এপ্রিলের কথা।

সে সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কেপিসিএলের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দিতে অনুরোধ করে সরকারকে বার্তা পাঠানোর খবরে শেয়ার দরে দেখা দেয় উত্থান।

তবে তখনও ৪৩ টাকায় ওঠার পর দাম আবার ৩৫ টাকার ঘরে নেমে আসে। এরপর সেপ্টেম্বরে কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিলে সংসদ সায় দেয়াকে কেন্দ্র করে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শেয়ার দর আবার ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

কেপিসিএলের মতোই আরেক বিদ্যুৎ কোম্পানি সামিট পাওয়ারের শেয়ারও দর হারাচ্ছে। গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ২৫ পয়সা আয় করে সাড়ে ৩ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার পরও শেয়ার দর ধরে রাখতে পারেনি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় কমে গেছে। এই তিন মাসে শেয়ারে আয় হয়েছে ১ টাকা ২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ২৯ পয়সা।

আয় কমার এই ব্যাখ্যায় সামিট জানিয়েছে, তাদের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আয় কমেছে।

গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৩৯ টাকা ২০ পয়সায়। এই সময়ে সর্বনিম্ন দর ছিল ৩৮ টাকা ৩০ পয়সা। তবে গত ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর দর কিছুটা বাড়ে।

কেপিসিএলের দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ না বাড়লে এই ইউনাইটেড পায়রার ৩৫ শতাংশের মালিকানা ওপর নির্ভর করতে হবে কেপিসিএলকে

কেপিসিএলের আদ্যোপান্ত

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ২১১ টাকায়। এটি যে মেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তা বন্ধ হয়ে যাবে, সে বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধারণা ছিল না।

কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল মোট তিনটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে একটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিষয়টি নিয়ে জানতে পারে।

এরপর থেকে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ে লভ্যাংশ পেয়ে আসছে বিনিয়োগকারীরা। এই দুটির মধ্যে ১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল-১-এর মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মে। আর ৪০ মেগাওয়াটের নওয়াপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয় ২৮ মে।

গত ২০ মে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে আমাদের চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রয়েছে।’

মেয়াদ শেষে কেন্দ্র দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই চেষ্টা তদবিরের কতটা এগোল, সে বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে এখনও বিনিয়োগকারীদের অস্পষ্টতায় রাখা হয়েছে।

গত ৩১ অক্টোবর তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৯.৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল ২০.৪৭ শতাংশ শেয়ার। আর দশমিক ১৮ শতাংশ আছে বিদেশিদের হাতে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে আছে মোট শেয়ারের ৬৯.৯৯ শতাংশ।

এ বিভাগের আরো খবর