বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের ৭ বছরেও চালু হয়নি শিশু হাসপাতাল

  •    
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:৩৯

২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর হাসপাতালটিকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করতে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ কার্যক্রমই শুরু হয়নি। চালু হয়নি শিশু হাসপাতালের কার্যক্রমও। কাজ না হওয়ায় বরাদ্দ করা ১০০ কোটি টাকা ফেরত যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেট সফরে এসে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। এরপর হাসপাতালটি ২০০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে প্রায় সাত বছর হতে চললেও এখনও এই শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফেরত গেছে বরাদ্দের টাকাও।

স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ও লোকবল সংকটে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আর গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজও শুরু হয়নি।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে এখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। এ কারণেও এই হাসপাতালকে শিশু হাসপাতালে উন্নীত করা যায়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এরপর বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকায় অবকাঠামোগত কিছু সংস্কার করে গণপূর্ত বিভাগ।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর হাসপাতালটিকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করতে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ কার্যক্রমই শুরু হয়নি। চালু হয়নি শিশু হাসপাতালের কার্যক্রমও। কাজ না হওয়ায় বরাদ্দ করা ১০০ কোটি টাকা ফেরত যায়।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘২০০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতালের ডিজাইন রেডি ছিল, অর্থ বরাদ্দও ছিল। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

‘সিলেটের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু এই টাকার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।’

জানা যায়, ১৯৭৮ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (বর্তমান ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল) চৌহাট্টা থেকে কাজলশাহ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে পুরনো হাসপাতালের স্থাপনা। ১৯৯২ সালে এটি সিলেট সদর হাসপাতাল হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২ সাল থেকে এটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতাল ছিল। ১৯৯৮ সালে সিলেট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল নামকরণ করা হয়।

তবে তাড়াহুড়ো করে লোকবল ও যন্ত্রপাতি সংকট নিয়ে চালু হয় শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ৩০ শয্যার লোকবলও নেই। আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাও অনুপস্থিত। জরুরি বিভাগ থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় শুরু থেকেই তা বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল হিসেবে চালু করতে পদ সৃষ্টি করে জনবল নিয়োগের জন্য ২০১৫-১৬ সালে চার দফা চিঠি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর মধ্যে গত বছরের মার্চ থেকে ‘করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ ঘোষণা করে সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়।

বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেও বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমতি হয়নি। ফলে লোকবলও নিয়োগ হয়নি।

‘কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করলেই হাসপাতাল হয় না। হাসপাতালের জন্য লোকবল, যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন হয়। এসব না থাকায় বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল চালু করা যায়নি।’

২০০ শয্যায় উন্নীত করতে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দ হলেও কাজটি গণপূর্ত বিভাগ না স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ করবে তা নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। শেষ সময়ে এসে সিদ্ধান্ত হয় গণপূর্ত বিভাগ কাজটি করবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তারা কাজের নকশা জমা দিতে পারেনি।

‘বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল চালুর জন্য আমি আরেকটি প্রস্তাব তৈরি করেছি। দ্রুতই তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। করোনার কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে কাগজে-কলমে হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও জনবল নেই ৩০ শয্যা হাসপাতালেরও। করোনার সংক্রমণ বাড়ার পর ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিৎিসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে এসে চালানো হয় এই হাসপাতালের কার্যক্রম।

এ ব্যাপারে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের অধীক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, ‘বর্তমানে এখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। লোকবল সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। আর বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল চালু করাটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিষয়। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর