বিস্ফোরণের বিকট শব্দে শুরু হয় ভবনের বাসিন্দাদের ছোটাছুটি। আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় দুই যুবক দৌড়ে নিচে নেমে পাশের পুকুরে ঝাপ দেয়। আরেকজন পোড়া শরীর নিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে থাকে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কদমতলী এলাকায় আদনান টাওয়ারের কেয়ারটেকার ও এক দোকানি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার সাততলা ভবনটির চারতলায় গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ তিন যুবককে রাজধানীতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার একজন মারা যান। অপর দু’জনও আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের চারতলায় যে কক্ষটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটির তিনটি দরজা ভেঙে পড়ে আছে। জানালার কাচগুলো ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া বিছানার চাদর, তোষক ও কাপড় এখানে সেখানে পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কক্ষটির ভেতরে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
ভবনের কেয়ারটেকার আবদুল বারেক বলেন, ‘বিস্ফোরষণর শব্দে ভবনের লোকজন ছোটাছুটি ও চিৎকার করতে থাকে। ভবনের ভেতরে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সবাই একসঙ্গে নিচে নামতে চায়। এরই মাঝে পোড়া শরীর নিয়ে তিনজন দৌড়ে নিচে নামতে থাকে।’
ভবনটির নিচে থাকা দোকানি মোহাম্মদ তুহিন বলেন, ‘বিস্ফোরণে আগুন লাগার পর দুই যুবক নিচে নেমে পাশের পুকুরে ঝাপ দেয়। সে সময় তাদের পরিহিত কাপড়ে আগুন জ্বলছিল। এর পরপরই আরেক যুবক নিচে এসে মাটিতে গড়াগড়ি দি থাকে। কিছুক্ষণ পর তাদেরকে হাসপাতালে নিতে গাড়িতে তোলা হয়।‘
তুহিন জানান, দগ্ধ ওই তিন যুবক চার মাস আগে ওই কক্ষ ভাড়া নেন। তাদের বাড়ী নেয়াখালীতে। এই ভবনের আরও বেশকিছু ফ্ল্যাটে তাদের মতো ব্যাচেলর ভাড়াটে থাকেন।
ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা পোশাক শ্রমিক মো. হামিম বলেন, ‘অনেক শব্দ হইছে। মনে হইছে পুরা বিল্ডিং কেঁপে গেছে। রুম থেকে সিঁড়ির সামনে গিয়ে দেখি ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার। উপরে উঠে চারতলার সামনে গিয়ে দেখি দরজা ভাঙা, ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় আগুন জলছে। পরে দ্রুত নিচে নেমে যাই। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভাতে শুরু করেন।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের আদমজীর সিনিয়র স্টেশন অফিসার রুহুল আমিন নিউজবাংলাকে জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়। আর আশপাশের লোকজন দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
তিনি জানান, কক্ষটির দরোজা-জানালা বন্ধ ছিল। গ্যাসলাইনের পাইপ লিকেজ হয়ে ফ্ল্যাটে গ্যাস জমে থাকে। ওই অবস্থায় ম্যাচের আগুন অথবা বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে তিন যুবক দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে দুই জনের শরীরের শতভাগ এবং একজনের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধদের মধ্যে মামুন শুক্রবার সকালে মারা যান। জীবন ও পারভেজ চিকিৎসাধীন। তিনজনই তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী। বয়স ২০ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।